জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে……. কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভালো সেবা পাচ্ছে না রোগীরা!

0
3264

মাহাফুজ আহমেদ তৌহিদ: কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল বছর খানেক আগে চিকিৎসা সেবাই খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং সারা দেশে রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই।হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কটে সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বারবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগান্তিতে আছে কুষ্টিয়াসহ চার জেলার মানুষ। হাসপাতালটিতে ৫৮টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৩৩ জন চিকিৎসক। বছর খানেক আগে চিকিৎসা সেবাই খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং সারা দেশে রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই।
১৯৬৩ সালে স্থাপিত এ হাসপাতালের শুরুতে শয্যা সংখ্যা ছিল ১৫০। ২০০৫ সালে উদ্বোধন হলেও ২০১০ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল স্কুলে (ম্যাটস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ চালুর দুই বছর পর কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে অস্থায়ী ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
ফলে এখন শুধু কুষ্টিয়া নয় আশপাশের জেলা ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ী জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য আসে এ হাসপাতালে। কিন্তু সে অনুসারে বাড়েনি লোকবল, বাজেট, আর সেবার মান।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। সেখানে আছে মাত্র ৩৩ জন। এছাড়া সেবিকা ও বিভিন্ন বিভাগের টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য ৭১টি পদেও লোকবল নেই।
আরএমও আরও জানান, হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও প্রতিনিয়ত এখানে ৫’শ থেকে সাড়ে ৫’শ রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে আগত প্রায় ১ হাজার ৫’শ রোগীর সেবা দিতে অন্তত ১৫ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন থাকলেও তা সামলাতে হচ্ছে ৫ জন চিকিৎসককে দিয়ে।
জরুরি বিভাগের ৪টি পদ থাকলেও পদ শূন্যতায় মাত্র একজন চিকিৎসককে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। সার্জিকাল বিভাগে কনসালটেন্ট চিকিৎসকের ৩টি পদের মধ্যে এক জনকে দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। হাসপাতালের একমাত্র মেডিসিন কনসালট্যান্ট সালেক মাসুদ এক বছর আগে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে বদলি হয়েছেন। এরপর এখন পর্যন্ত ওই পদে কোনো কনসালট্যান্টকে দেয়া হয়নি। প্রায় দেড় বছর আগে গাইনি কনসালট্যান্ট রুমী ফরহাদ আরা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে বদলি হলেও সেখানে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুই বছর ধরে নেই অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট।
ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, হাসপাতালে মাত্র ৩টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। রোগীর যা চাপ তাতে আরও ৩টি অপারেশন থিয়েটার দরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, কেবল মাত্র কুষ্টিয়া জেলার রোগী হলেও সেবার মান আরেকটু বাড়ানো যেত। কিন্তু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় অনেক রোগী উন্নত চিকিৎসার আশায় এখানে আসছেন। এদের বেশিরভাগের চিকিৎসা স্ব স্ব জেলা হাসপাতালেই করা সম্ভব বলে জানান তিনি। তার দাবি, ওইসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিজেদের ফ্রি রাখতে সাধারণ রোগীদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে দিন দিন সঙ্কট আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়া শল্য চিকিৎসার রোগীদের ক্ষেত্রে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। সিরিয়ালের জটিলতায় দিনের পর দিন ধরে ঘুরতে থাকার অভিযোগ রয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দিন ভর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের কয়েকটি ফ্লোরে ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। গন্ধে রোগীরা নাক বন্ধ করে হাঁটছেন। পরিস্কার করার লোক নেই। এছাড়া টয়লেট থেকে ময়লা পানি বের হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয় দেখারও কেউ নেই। বটতৈল এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মোতলেব নামের এক রোগী বলেন, রক্ত পরীক্ষা দিলেও হাসপাতাল থেকে করাতে পারেননি। পরে হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে বাধ্য হয়েছেন। এক দালালের মাধ্যমে তিনি সেখানে যান। হাসপতালের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ডা. আজিজুন্নাহার এখানে যোগ দেয়ার পর সেবা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তার সময়ে হাসপাতালটি সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রোগীদের সেবার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন তিনি। কিন্তু তিনি বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দালালদের দৌরাত্ম বেড়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে। চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের সেবা পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় অবহিত করেছি।