কুষ্টিয়ায় একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুয়া ডাক্তার ও সাইদুল আটক!

0
1253
সাংবাদিকের উপর হামলায় একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুয়া ডাক্তার ও মালিক সাইদুল আটক! ছবি: গড়াইনিউজ২৪.কম

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: আজ সোমবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বক্ষব্যাধী ও চর্ম যৌন সেক্স রোগ বিশেষজ্ঞ এমবিবিএস ডাঃ আমানত আলী শেখের চেম্বারে বসে নিজ পরিচয় গোপন রেখে পল­ী চিকিৎসক আলামিন শেখ এমবিবিএস সেজে দীর্ঘদিন রোগী দেখছে এমন সংবাদের পেয়ে এশিয়ান টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান রিজু, এশিয়ান টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন আল আমিন খান রাব্বি ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যখবর পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহামন ও সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শরিফুল ইসলাম সংবাদ সগ্রহ করতে যায়। সে সময় একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাইদুল ইসলাম, ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার আলামিন শেখসহ সাইদুলের পোষা বাহিনী মিলে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় এশিয়ান টেলিভিশনের ক্যামেরা ও ক্যামেরার স্টান ভাংচুর করে এবং লাইভ করার জন্য ব্যবহৃত ভিডিও ক্যাপচার ডিভাইজ কেড়ে নেয়। ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্মার্ট মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করার সময় আলআমিন এবং জিল্লুর মেবাইল কেড়ে নেয়। পড়ে সাংবাদিকরা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানালে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করেন এবং একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাইদুল ইসলাম ও ভুয়া ডাক্তার আলআমিন শেখকে আটক করে। আটককৃতসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনেকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং ২৩ তারিখ ১৫-০৬-২০২০।
উলে­খ, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে। আর এসব অননুমোদিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে রুগী ও রুগীর আত্মীয় স্বজনরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার পূর্ব মজমপুরস্থ ডিসি কোর্টের বিপরীতে একটি ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে একতা হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। হাসপাতালটির নেই কোনো জরুরি বিভাগ, নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত কোনো যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা পার্টটাইম কতিপয় ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চলছে জটিল কঠিন অপারেশনসহ নানা রোগের চিকিৎসা।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র,কমিউনিটি ক্লিনিক ও এক শ্রেণীর পল­ী চিকিৎসক রোগী ধরা দালাল হিসেবে কাজ করছে। রোগী প্রতি কমিশনের আশায় এসব দালালরা। অভিনব কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে তথাকথিত এই হাসপাতালে ভর্তি করছে। ফলে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ছাড়াই এই হাসপাতাল চললেও তাদের রোগীর অভাব হচ্ছে না। চিকিৎসার নামে প্রতি নিয়ত চলছে অপচিকিৎসা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিক-কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়রা এ হাসপাতালটিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারিবিধি মোতাবেক প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগণষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র, পারমাণবিক শক্তি কমিশনের অনুমতিপত্র, আয়কর-ভ্যাট, ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজি ডিপ্লোমাধারী সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে। এ ছাড়াও ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড লাবরেটরিজ রেগুলেশন’ অনুযায়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট কোন হাসপাতালের জন্য জরুরি বিভাগে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসা কর্মকর্তা, তিনজন ডিপ্লোমাধারী জ্যেষ্ঠ সেবিকা, তিনজন কনিষ্ঠ সেবিকা, তিনজন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, একজন ব্যবস্থাপক, দু’জন পাহাদার, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্ত্রপাচার কক্ষ (অপারেশন থিয়েটার) না থাকলে সেখানে কোনো রোগীর অস্ত্রপাচার (অপারেশন) করা যাবে না বলে শর্ত দেয়া রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজশে এই হাসপাতালটির মালিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, এর আগে এ হাসপাতাল থেকে এস শেখ নামে তথাকথিত এক এমবিবিএস এমআইএজিপি (ক্যাল) এফসিসিপি (ফাইনাল দিল­ী) চর্ম, যৌন, হাঁপানী ও এলার্জী রোগ বিশেষজ্ঞ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী হাসপাতাল ডিগ্রীধারী ডাক্তারকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর রনি খাতুন (২৫) নামের এক গৃহিণী হাসপাতালটিতে ল্যাব টেষ্ট করাতে এলে টেকনিশিয়ান দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়। পরে ঐ দিনই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্ব^র এই হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের একটি দল। এসময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গাউসুল আজম হাসপাতালটিকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা ও একজনকে একমাস কারাদন্ড প্রদান করে। হাসপাতালটির সামনে নামিদামি ডাক্তারদের নাম সংবলিত চোখ ধাঁধানো ব্যানারসহ ডিজিটাল সাইনবোর্ড দেয়া থাকলেও নেই সেবার মূল্য তালিকা। উপজেলার বিভিন্ন অলিগলিতে হাসপাতালটিতে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা মেডিকেল কলেজের বড় বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তার বসার কথা বলে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করলেও মূলত এটা তাদের ব্যাবসায়ী পলিসিমাত্র। আর এসব দেখেই গ্রামের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সহজ-সরল-অসহায় মানুষ একতা হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাতা ফাঁদে আটকে যাচ্ছে। এসব নামিদামি ডাক্তারদের নাম ভাঙিয়ে ও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হাজার হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মনিটরিং কিংবা জবাবদিহিতা না থাকায় অবৈধ এ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কর্তৃপক্ষের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে।