বিআরবি কুষ্টিয়ার সম্পদ: রক্ষা করা আমাদের-ই দায়িত্ব

0
869

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: খবরের শিরোনাম অনেক সময় ভিতরের খবরকে জানার জন্য আগ্রহী করে তোলে। আজ দু-একদিন কুষ্টিয়ার কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা, বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকার শিরোনাম “করোনায় সনামধন্য প্রতিষ্ঠান বি আর বি নিয়ে কিছু কথা” “করোনায় বি আর বি নিয়ে দুটি কথা” “করোনার ক্রান্তিকাল ও বি আর বি” ইত্যাদি শিরোনামের একটি খবর বা বার্তা বা ম্যাসেজ আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। তবে এটাকে খবর বা বার্তার থেকে বস্তুনিষ্ঠ একটি প্রতিবেদন বলাই শ্রেয়। উক্ত প্রতিবেদনে খুব সংক্ষেপে দেশমার্তৃকার সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বি আর বিকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়ে মন ভারাক্রান্তে ভরে যায়। মনে করিয়ে দেয় চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কুষ্টিয়া মোহিনীমিল, কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিল, আর নিভু প্রায় কুষ্টিয়া সুগার মিল ও রেনউহক এন্ড জগজেস¦র প্রতিষ্ঠান গুলোর কথা।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, বেশ কিছু দিন যাবৎ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এতে থাকতে পারে রাজনৈতিক চক্র, সাংবাদিক চক্র, সমাজের কিছু আঁতেল যারা সর্বদা পরনিন্দা করে থাকে এবং কি করে একটি প্রতিষ্ঠানকে শিখর থেকে শেকরে নামিয়ে আনা যায়। কিন্তু এতে কি লাভ তাদের? আজ যদি কুষ্টিয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়া উলে­খিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকানো যায় তাহলে কি দেখতে পায়? দেখতে পায় মুষ্টিমেয় কতিপয় কিছু ব্যক্তি ছাড়া সমাজের খেটে খাওয়া কুলি, মজুর ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। তারা আজ কেউ রিকসা চালক, কেউবা মুটেÐমজুর, আবার কেউ বা ভিখেরী। আর অনেকেই সর্বস¦ হারিয়ে ক্ষুধার জ¦ালা বুকে নিয়েই এই ধরাধাম থেকে বিদায় নিয়েছে। আর রেখে গেছে সেই উত্তরসূরি যাদের অনেকেই সঠিক লালনপালন ও পরিচর্যার অভাবে হয়ে গেছে সমাজের অন্ধকারের বাসিন্দা।
আমরা দেখছি যে, মোহিনী মিল ও কুষ্টিয়া টেকসটাইল মিল পরবর্তি কুষ্টিয়ার গর্ব বি আর বি গ্র“প উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটির অভাব অনেকাংশেই পূরণ করে এসেছে। আজ কুষ্টিয়ার অর্থনীতির চাকাকে একমাত্র বি আর বি গ্র“পই সচল রেখেছে। তাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, প্রতিবছরই কোন না কোন ইউনিট চালু করছে এর ফলে বেড়েছে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। যার সংখ্যা গ্র“পে প্রায় ১০ হাজার, আর এর প্রতিটির সাথে যুক্ত কমপক্ষে চারজন, তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই গ্র“পে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। এই শিল্প ও জনগোষ্ঠি ঘিরে আমার জেলায় গড়ে উঠেছে সকল ব্যাংকের শাখা, সকল বীমা প্রতিষ্ঠানের শাখা, বিভিন্ন অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান যে সকল প্রতিষ্ঠানে কুষ্টিয়া জেলারই ছেলেমেয়েরা চাকুরী করে তাদের এবং তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছে। এত বড় জনগোষ্ঠি চালাতে গেলে তো প্রতিষ্ঠানের স¦ার্থে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হয়েই পড়ে। আর এটাকেই পুঁজি করে কারো পেছনে লাগা সত্যিই দুঃখজনক। ইতিহাস থেকে দেখেছি আপন ঘরেই শত্র“র নিবাস, উপমা আছে ঘরের শত্র“ বিভীষান হ্যাঁ এ উদাহরণগুলো যথেষ্ট কার্য্যকর। কুষ্টিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা ছিল। বি আর বির ক্ষেত্রেও এমনটি যে হচ্ছে না তাও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। শোনা গেছে বি আর বির কিছু অফিসিয়াল ডকুমেণ্ট, দপ্তর আদেশ, নোটিশ কর্মচারী/কর্মচারীর মাধ্যমে সাংবাদিক বা বাইরের লোকের হস্তগত হয়েছে যদিও তাতে বিআরবির কিছু আসে যায় না। তারপরও কোন অফিসিয়াল ডকুমেণ্ট, তথ্যাদি এভাবে বাইরে চলে গিয়ে কো¤পানীর পলিসি বা সিক্রেসি ফাঁস হওয়া নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি স¦রুপ। তাই সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখতে পায় কুচক্রীমহলের এটা একেবারে এঁটে সেঁটে মাঠে নামা ঠিক যেমনটি করেছিল তাদের পুর্বের মিশনগুলিতে।

স¤মানিত পাঠককুল, ব্যক্তিগত ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান জন্ম নিলেও একটি পর্যায়ে গিয়ে কিন্তু তা আর ব্যক্তির থাকে তা হয়ে উঠে দেশ ও দশের। দেশ ও দশের বলতে বোঝাতে চাচ্ছি প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাজস¦ আয় করে দেশ বাঁচছে, আর এখানে শ্রম দিয়ে দশজন তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। আজ বি আর বি ঠিক সেই মাইল ফলক স্থাপন করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটির একটি স্থানে উলে­খ করা হয়েছে যে, “বর্তমানে অনেক অর্থবিত্ত লোকের শিল্পে নিরুৎসাহিত হওয়া এটি একটি বড় কারণ। ঐ সমস্ত বিত্তবানদের মন্তব্য টাকা ব্যাংকে রেখে নিয়মিত ইণ্টারেস্ট তুলে খাবো, অযথা কেন ঘরের খেয়ে বোনের মোষ চড়াতে যাবে”। সত্যিই এটি খুবই যুগোপযোগি কথা। এই সমস্ত বিড়ম্বনার কারণেই অনেকেই সাধ্য থাকলেও কোন শিল্প গড়ে তুলছে না। কিন্তু বি আর বি একের পর এক শিল্প গড়ে তুলছে। তাও আবার স্থানীয়ভাবে। এই জন্য আমি গর্ববোধ করি যে এই গ্র“পের চেয়ারম্যান মহোদয় কুষ্টিয়ার সন্তান এবং কুষ্টিয়াকে নিয়েই তার চিন্তাচেতনা।
স্থানীয়ভাবে শিল্প গড়ায় অনেক বাধা বিপত্তি থাকে, কেননা স্থানীয়ভাবে শিল্প গড়াতে এই যে বি আর বি যে বাধা বিপত্তি ফেস করছে তাতো থাকবেই, আর এ সমস্ত বাধাবিপত্তি ছাড়াও নানান সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ধরা যাক বি আর বির এই শিল্প গুলি যদি ঢাকা মুখি করা হতো তাহলে যেহেতু সমস্ত পণ্য বিপনণের কেন্দ্রস্থল ঢাকা তাই তাদের ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট কম পড়তো, তদ্রুপ কাঁচামাল আমদানীর ক্ষেত্রেও ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট কম পড়তো, কেননা চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে কুষ্টিয়ার তুলনায় ঢাকা পর্যন্ত ট্রান্সপোর্টেজন কসট কম, ব্যাংক ঋনের শর্তাবলীতেও হয়তো কিছু শিথিলতা পেত, লেবার কস্ট কম হতো ইত্যাদি। তাছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে এখানে আসতে চান না কোন এক্সপার্টিজ, কিন্তু ঢাকাতে সে অসুবিধে নেই। আর বি আর বি কর্তৃপক্ষ এত অসুবিধার মধ্যেও স্থানীয় লোকবলকে ঘষে মেজে তৈরী করেছে। শোনা যায় এর স‚চনা লগ্লে মাঠ থেকে ধান কাটা, গরু চড়ানো, রাজের যোগাল এ সমস্ত লোকবলকে ডেকে নিয়ে কাজ দেয়া হয় এবং তাদেরকেই ট্রেনিং দিয়ে এমন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় যে আজ বি আর বির সমজাতিয় প্রতিষ্ঠান সমুহে যারা আছেন তাদের অনেকেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে যাওয়া লোক। তাহলে বি আর বি কি তাদেরকে কাজ শিখিয়ে অন্যায় করেছে?
তাহলে এত কিছুর পরও স্থানীয়ভাবে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার একটি মাত্র কারণ স্থানীয় মানুষের প্রতি তাদের ভালবাসা। আর স্থানীয় মানুষ কি নিষ্ঠুর ভাবেই সেই ভালবাসার প্রতিদান দিচ্ছে। জেনেছি উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলি, সাংবাদিক মহল বলি আর সুবিধাবাদি লোক বলি তারা বিভিন্ন সময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের স¦ার্থ উদ্ধার করে থাকেন। আর একটু স¦ার্থের টান পড়লেই নিজেদের রোষানলে ফেলবেন এ প্রতিষ্ঠানটিকে তা ঠিক নয়।
আমি উলে­খ করতে চাই যে, বি আর বি গ্র“প শুধু যে উৎপাদনমুখি শিল্পের মাঝেই তার উন্নয়নের ধারাকে সীমাবদ্ধ রেখেছে তা কিন্তু নয়। বি আর বি গ্র“প সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের দিকেও ক্রমান¦য়ে এগিয়ে চলেছে। যার উদাহরন স¦রুপ বলা যায় ঢাকাতে অবস্থিত বি আর বি হসপিটালস লিঃ এবং কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশদ্বারে নির্মীয়মান বিশাল অট্রালিকা সম¦লিত সেলিমা মেডিকেল কলেজ হসপিটালস লিঃ। এই হসপিটালটি চালু হলে কুষ্টিয়াবাসী, আশপাশের জেলাবাসী যারা কিনা একটুতেই ঢাকা ও ভারতগামী তারা সাধ্যের মধ্যে সর্বন্নোত সেবা পাবেন। সেই সাথে বৃহত্তর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এই প্রতিষ্ঠানে। আজ আমরা কি দেখতে পারি কোন রাজনীতিবিদ, কোন সাংবাদিক কোন শিল্প গড়েছে। যদি গড়তো তাহলে বুঝতো এই বিড়ম¦নার কি জ¦ালা।
উৎপাদনমুখী শিল্প ও স¦াস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের পর আসা যাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমার মত অনেক অভিভাবকই চিন্তা করতেন কিভাবে তার সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষাদান করাতে পারবেন এবং তা হবে সাধ্যের মধ্যে। এ জেলায় অনেক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি আছেন তাদের কেউই শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসেননি। বি আর বি গ্র“পের চেয়ারম্যান অজান্তেই ঐ সমস্ত অভিভাবকদের মনোবাসনা পূরণ করেছেন হাসিব ড্রীম স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এ যেন ঐ সমস্ত অভিভাবকদের কাছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
বাংলাদেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রাষ্ট্রের টাকা পরিশোধ না করার স¦ার্থে নিদেজের লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষনা করেছেন। দেশের টাকা নিয়ে গেছেন বিদেশে। সেখানে বসবাস করছেন নিজেদের মত করে সুখ স¦াচ্ছন্দে। কিন্তু আমার দেখায় বি আর বির চেয়ারম্যানকে কখনও টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় ঐ সমস্ত মানুষের তালিকায় শিরোনাম হতে দেখিনি।
লক্ষ্য করেছি উক্ত প্রতিবেদনের পক্ষে অনেকেই অনেক ভাল ভাল মন্তব্য করেছেন যারা প্রকৃত বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আবার অনেকেই বিরুপ মন্তব্যও করেছেন, তাদেরকে বলবো মন্তব্য করার অধিকার আপনার আছে। কিন্তু অনুরোধ আগে প্রকৃত ঘটনা জানুন, বাস্তবতাকে অনুধাবন করুন তারপরই মন্তব্য করুন। আমাদের উচিৎ অসত্য তথ্য দিয়ে মোঃ মজিবর রহমান সাহেবকে হয়রানি না করা। বরং সকল কাজে তাকে উৎসাহ প্রদান করাই হবে আমাদের সঠিক কাজ। আল­াহ পাকের নিকট ফরিয়াদ করতে হবে তিনি যেন কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসীর কল্যানে আরও ভাল ভাল কাজ করতে পারেন, নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। অসত্য তথ্য দিয়ে আমরা যদি তাকে বিড়ম¦নায় ফেলতে চাই তবে অনেক শিল্প উদ্যোক্তাই যারা কিনা বি আর বি কে মডেল হিসাবে নিয়ে শিল্পোনুরাগী হয়েছেন তারা এই বিড়ম¦না দেখে এই জেলায় সকল ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়া ও উন্নয়ন মুলক কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।
তাই, কুচক্রী মহলকে বলবো জীবনে অনেক হয়েছে আর নয় এবারে আসুন সবাই মিলে দেশকে ভালভাসি, দেশের প্রতিষ্ঠানকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি। আর পরিশেষে, এখানে খেটে খাওয়া শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদেরকে বলবো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক মহল, সুবিধাবাদি লোকজন কিন্তু আপনাকে খাওয়াই না পড়াইনা, আপনার বিপদে কিন্তু তারা এগিয়ে আসে না। আজ যদি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবেন আপনারা অর্থাৎ এখানে কর্মরত শ্রমিক,কর্মচারী, কর্মকর্তাগণ। তারা আপনাদেরকে কাজ দিতে পারবে না, তারা আপনাদের ভরণ পোষন দিবেন না। তাই আপনাদেরকে বলবো আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন, পর আপন চিনতে শিখুন। নিজের ভাল চান, আর নিজের ভাল চেতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে ভালবাসুন। দেখবেন নিশ্চয় এর সুফল পৌছে যাবে আপনার আপন নিবাসেÐ যেমনটি হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে ।