আবাসিক চেহারা হারাচ্ছে উত্তরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড-১

0
1200

গড়াইনিউজ২৪.কম:: রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা নগরায়নের মধ্যে অন্যতম উত্তরা মডেল টাউন। ৮০ এর দশকে এই পরিকল্পিত শহরটি গড়ে তোলা হয়। উত্তরায় বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও রয়েছে নানা সমস্যা। আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন। এসব ভবনে শপিং মল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ফলে আবাসিক চেহারা হারাচ্ছে উত্তরা। ডিএনসিসির তথ্যমতে, উত্তরা মডেল টাউনের ১৪টি সেক্টর নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক নাম্বার ওয়ার্ড গঠিত। দেশের উত্তরাঞ্চল ও ময়মনসিংহ এলাকার সব যানবাহন উত্তরা দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও উত্তরার পার্শ্বে অবস্থিত হওয়ায় এই এলাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যানজটের কারণে সকালে অফিসগামী ও স্কুল-কলেজগামী যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। ফলে উত্তরার বাসিন্দাদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে  হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উত্তরার ১৪টি সেক্টরেই বর্তমানে রয়েছে গ্যাসের সংকট। সকাল ৯টা হলেই দেখা মেলে না গ্যাসের। বিকাল ৩টা পর্যন্ত কম থাকে গ্যাস। শুধু দিনে নয়, রাতেও থাকে গ্যাসের সংকট। এছাড়া ১৩ নং সেক্টরসহ দু’একটি সেক্টরে রয়েছে পানি সমস্যা। অধিকাংশ সেক্টরের সড়ক ভালো থাকলেও ১ ও ৩ সেক্টরের প্রধান সড়ক, ৯ নং সেক্টরের ১, ২ নং সড়কের পূর্বাংশ, ৮ নং সড়ক ও ৪ নং সেক্টরের রাজউক কলেজের সামনের সড়কটির অবস্থা বেহাল। ফুটপাত, হকার ও যানজট সমস্যা উত্তরার সবক’টি সেক্টরের নিত্যদিনের চিত্র। সামপ্রতিক সময়ে কয়েকটি সেক্টরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগ গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গাছ কাটার নেপথ্যে প্রভাবশালীদের কোটি টাকার বাণিজ্য রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের প্রধান রোডটি ভাঙাচোরা। এই সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। স্কলাসটিকা স্কুলের কারণে এই সেক্টরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট থাকে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, প্রধান সড়কে কাভার্ডভ্যান ঢুকে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। খেলার মাঠ দখল করে উত্তরা ক্লাব গড়ে তোলার কারণে শিশু ও কিশোররা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। উত্তরা ১ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির নির্বাহী সদস্য মো. সাজ্জাদ জহির হাসান জানান, সমপ্রতি গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাছ আমাদের অক্সিজেন। গাছগুলো ধ্বংস করে রাস্তা বড় করার পক্ষে আমরা নই। উত্তরা ৩ নং সেক্টরে গাছ কেটে সড়ক প্রশস্ত করার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন এলাকাবাসী। এর পেছনে প্রভাবশালীদের বাণিজ্য রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। উত্তরা ৩ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তফা কামাল ও বর্তমান সহ-সভাপতি জুয়েল আইচ বলেন, বন বিভাগ ও রাজউকও চায় না গাছ কাটতে, তারপরেও অদৃশ্য শক্তির কারণে গাছ কাটার প্রস্তুতি চলছে। গাছ আমাদের অক্সিজেন সোর্স। গাছ কাটার বিপক্ষে এলাকাবাসী। উত্তরা ৫ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা চৌধুরী জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এছাড়া এই সেক্টরের ফুটপাত বেদখলে। এজন্য হাঁটতে সমস্যা হয়। ১৩ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির স্টাফ মো. আকাশ বলেন, গ্যাসের তো সমস্যা রয়েছে। এছাড়া এই সেক্টরে পানি সমস্যা বেশি। ৯ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির অফিস ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম জানান, এই সেক্টরে খেলার মাঠ, পার্ক নেই। লেকটি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। এছাড়া কয়েকটি সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরা মডেল টাউন সত্যিকার অর্থে মডেল টাউন দেখতে চান স্থানীয়রা। আবাসিক এলাকায় যেন বাণিজ্যিক ভবন অনুমোদন দেওয়া না হয় সেজন্য রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ বাসিন্দাদের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আফছার উদ্দিন খান ইত্তেফাককে বলেন, আমার ওয়ার্ডে ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিটা সড়ক নতুন ভাবে কার্পেটিং করা হয়েছে। ড্রেন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। এক কথায় এটি সত্যিকার অর্থের একটি মডেল টাউন হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।