১৪২টি হাওরের অর্ধেকের বেশি ফসল এখন পানির নিচে!

0
2059

গড়াইনিউজ২৪.কম:: হাওর অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের চারটি জেলা এবং নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ১৪২টি হাওরের অর্ধেকের বেশি ফসল এখন পানির নিচে। ভাটির কোটি মানুষের স্বপ্নের বোরো ফসলের ওপর অমানিশা নেমে আসায় এখন দুই চোখে শুধুই আঁধার দেখছেন তারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছ, হাঁস ও পাখির মড়ক। যেন হঠাত্ করেই অকূল পাথারে পড়েছে হাওরবাসী। যে হাওরের উদ্বৃত্ত খাদ্য দেশের অন্যান্য জায়গায় যেত সেই হাওরে এবার বোরো আবাদের অর্ধেকের বেশি ফসল পানির নিচে। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, হাওর এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় সাড়ে চার লাখ টনের মতো চাল নষ্ট হবে। তবে সারাদেশে এবার বোরোর উত্পাদন বেশি হওয়ায় হাওর এলাকায় বোরোর কিছু ক্ষতি হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। চলতি মৌসুমে এক কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টন বোরো উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগের ৪ জেলা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে মোট ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনায় ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর ও কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সবমিলিয়ে হাওরবেস্টিত এই ৬ জেলায় মোট ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরোর আবাদ হয়েছিল। যা সারাদেশে মোট বোরো আবাদের ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়। পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ৬টি জেলার সবকটি হাওর প্লাবিত হয়ে গত সোমবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৭ হেক্টরে জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া  নেত্রকোনায় ৭০ হাজার ও কিশোরগঞ্জে  ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, হাওর অধ্যুষিত ছয় জেলায় অর্ধেকের বেশি ফসল তলিয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেটে এবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। আশা ছিল এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১৫-১৬ লাখ টন চাল উত্পন্ন হবে। কিন্তু চৈত্রেই বোরো ফসল ডুবে গেলে কৃষকের সব স্বপ্নও ডুবে যায়। এর মধ্যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এখানে ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সিলেট বিভাগে শতকরা মাত্র ১২ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। আর সব গেছে পানিতে। বার্ষিক ৯ লক্ষাধিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত সিলেট অঞ্চলে এবার উদ্বৃত্ততো দূরের কথা উত্পাদিত খাদ্য দিয়ে হাওরবাসীর চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। সিলেটে এবার যেভাবে ফসলের বিপর্যয় শুরু হয় তা শত বছরেও ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সিলেট অঞ্চলের বর্ষীয়ানরা। ভাটির কোটি মানুষের একমাত্র অবলম্বন বোরো হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তারা। একই অবস্থা নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জেও। নেত্রকোনায় বন্যায় এবার ৬টি হাওর উপজেলাসহ সারা জেলায় আবাদকৃত ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর বোরো জমির মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, আটপাড়া, কলমাকান্দা এবং কেন্দুয়া উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার বন্যায় ধানের সাথে ৪৮০ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে অকাল বন্যায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদের মধ্যে মোট ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৮০৫ কোটি টাকা। ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও নিকলী উপজেলা ছাড়াও  করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, ভৈরব, তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ধান পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়। উল্লেখিত উপজেলাসমূহের ৪৪ দশমিক ৯ ভাগ জমির বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।