নারায়ণগঞ্জে আবারও আইভীর জয়

0
1941

গড়াইনিউজ২৪.কম:: আরেকটি সাফল্যের পালক যোগ হলো সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয়ের মুকুটে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ৭৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে। মূলত নারায়ণগঞ্জ শহরের দায়িত্বভার তার হাতে এলো টানা তৃতীয়বারের মতো। সিটি করপোরেশন হওয়ার আগের নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সর্বশেষ চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। প্রতিবারই তিনি বড় ব্যবধানে হারান প্রতিদ্বন্দ্বীদের। নারায়ণগঞ্জের ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সই করা ফল নিয়ে এসেছেন প্রার্থীদের এজেন্টরা। এই ফল যোগ করে আইভীর প্রাপ্ত ভোট দাঁড়ায় এক লাখ ৭৪ হাজার ৮২৬। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন তার অর্ধেকের কিছু বেশি ভোট। তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৭৪টি ভোট। আইভীর বিজয়ের খবরে তার কর্মী-সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। তারা মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলেন এলাকা। ছোট ছোট খণ্ড মিছিল বিজয়ের ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় ছুটে চলে। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আইভী সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় তিনি  তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার এই বিজয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ ও জীবিত সব মুক্তিযোদ্ধার প্রতি উৎসর্গ করেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তিনি নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি কয়েকটি অসংগতির কথা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের জানান, এসব কিছু পর্যালোচনা করে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। টানা ১৩ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করা আইভী অবশ্য এবারও তার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ভোটের আগের দিন বুধবার আইভী বলেছিলেন, নির্বাচনী প্রচারে তিনি যে জোয়ার দেখেছেন, তাতে ৭০ শতাংশ ভোট পাবেন তিনি। ভোটের ফলাফলেও তার কথার প্রতিফলন দেখা যায়, প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে তার বাক্সে।

এক উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর‌্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার ছিলেন এবারের নির্বাচনে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার ভোট শেষ হওয়ার কিছু আগে জানান, তখন ৬৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে, যা শেষ পর‌্যন্ত আরো বাড়বে। ১৭৪ কেন্দ্রের কোথাও কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। এই নিয়ে ভোটের ময়দানে তিনবারের প্রতিযোগিতায় প্রতিবারই জয়ের মালা উঠল আইভীর গলায়। প্রথমে ২০০৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে আইভী হারিয়েছিলেন ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে। সেবার আইভী ৩০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পান ১২ হাজারের কিছু বেশি। ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচনে আইভী হারান নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা ও দলের মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমানকে। সেবার ভোটের ব্যবধান হয়েছিল প্রায় এক লাখ দুই হাজার। ওই নির্বাচনে বিএনপি ভোটের আগে সরে দাঁড়ানোয় আইভীর জয় সহজ হয়েছিল বলেই ধারণা করা হয়। তবে এবার আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ভোটের লড়াইয়ে থাকায় আর অত সহজে জয় পাবেন না বলেই বলাবলি হচ্ছিল। কিন্তু ভোটের লড়াই শেষে আইভী বুঝিয়ে দিলেন নারায়ণগঞ্জে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।