বাংলাদেশ লিড ১২৮, হাতে ৭ উইকেট, জমজমাট মিরপুর টেস্ট

0
1211

গড়াইনিউজ২৪.কম::  মিরপুরে কারা জিতবে, এখনও বলার সময় আসেনি। তবে দারুণ জমে উঠেছে ঢাকা টেস্ট। এবং এ টেস্টেও যে ফল আসছে সেটা বলে দেওয়ার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। চট্টগ্রামের মতো উইকেট পড়ার মিছিল এখানেও। প্রথম দুই দিনে পড়েছে ২৩টি উইকেট।
শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ইমরুল আছেন ৫৮ রানে অপরাজিত। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে ১২৮ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ২২০ রানে।জবাবে ইংল্যান্ড ২৪৪ রান করলে ২৪ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মজবুত অবস্থায় চলে গেছে স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পিছিয়ে থাকার কিছুটা চাপ নিয়ে টি ব্রেকের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। এক প্রান্ত পেস, অন্যপ্রান্ত স্পিন আক্রমণ দিয়ে শুরু করে ইংল্যান্ড। তবে এ আক্রমণের বিপক্ষে প্রথম থেকে সাবলীল খেলতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ও ইমরুল। ৫৫ বলে অর্ধশত পূরণ করেন তারা। অনেকটাই ওয়ানডে মেজাজী ব্যাটিং।
ইমরুল অনেকটাই ধীরেসুস্থে খেলেন। তবে তামিম খেলেন নিজের মতো। মনে হয়েছিল এদিনও বড় ইনিংস খেলছেন তামিম। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই ৩৯ বলে ৪০ রান করে হঠাৎ আউট হয়ে গেছেন তামিম। তবে তার আগে ভালো শুরুটা করে দিয়ে গেছেন দলকে।
৬৫  রানে প্রথম উইকেট হারানোর পরপরই ১ রানে স্টোকসের বলে ফিরে যান মমিনুল হক। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তবে ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে সেই ধাক্কা সামলে নেয় বাংলাদেশ।৮৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ৬৫ বলে অর্ধশত পূরণ করেন ইমরুল। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ৫৮ রানে। তবে দিনের শেষ বলে আনসারির বলে ৪৭ রান করে ফিরে গেছেন রিয়াদ। বাংলাদেশের জন্য যেটা বড় ক্ষতি। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ১৫২ ।
এরআগে প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। এক পর্যায়ে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান ছিল তাদের। কিন্তু অষ্টম উইকেট জুটি ওকস- আদিল রশিদ বাংলাদেশকে হতাশ করে গড়েন ৯৯ রানের জুটি। আর এখানেই লিড নেওয়ার স্বপ্নভঙ্গ মুশফিকদের। উল্টো লিড নেয় ইংলিশরা।
৩ উইকেটে ৫০ করে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ দলে পেসার একজন, কামরুল ইসলাম রাব্বি। শনিবার সকালে উইকেটে ময়েইশ্চার ছিল। মনে করা হয়েছিল, অন্তত কয়েকটা ওভার রাব্বিকে দিয়ে করানো হবে। কিন্তু না, দুই প্রান্তেই যথারীতি স্পিন আক্রমণ আনেন মুশফিক।
মুশফিকের এ পরিকল্পনা সফলও। জলদি জলদি উইকেট তুলে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।
চট্ট্রগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরেই সকালে প্রথম উইকেটের মুখ দেখে স্বাগতিকরা। বেশ মেরে খেলতে শুরু করেছিলেন মঈন। তাকে ১০  রানে সরাসরি বোল্ড করেন মিরাজ। এরপর বিপদজনক বেন স্টোকসকে ০ রানে বিদায় করে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তাইজুল ইসলাম।
আগের ছিলেন ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন জো রুট।  বেন স্টোকসের আগেই ফিরে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার ক্যাচটি নিতে পারেননি মুশফিক ও রিয়াদ।
ঘটনাটা ঘটে ১৬তম ওভারে। বোলার ছিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ওভারের তৃতীয় বলটি ঠিকমত খেলতে পারেননি জো রুট। ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপ ও উইকেট কিপারের মাঝামাঝিতে। মুশফিক সেটা ধরতে গেলে বল আঙুলে লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। কিন্তু সেই ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
ক্যাচ ড্রপের মাশুল দিতে হয় দলকে।বেয়ারস্টোর সঙ্গে জো রুটের জুটিটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। অবশেষে জুটি ভাঙেন সেই মিরাজই, ২২ রানে ফেরান বেয়ারস্টোকে। কিন্তু ততক্ষণে ৪৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা।
অভিষিক্ত জাফর আনসারি ভালো ব্যাট করতে জানেন। সেই ইঙ্গিতটাও দিচ্ছিলেন। তবে তাকে বেশিক্ষণ উইকেটে দাঁড়াতে দেননি মিরাজ। ২৩ রানে আনসারিকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূরণ করেন এ অফ স্পিনার। চট্টগামে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৮০ রানে ৬ উইকেট।
অভিষেক এবং তার পরের ম্যাচে মানে টানা দুই টেস্টে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল না  কোনো বাংলাদেশি বোলারের। মিরাজই একমাত্র বাংলাদেশি বোলার যিনি ক্যারিযারের প্রথম দুই টেস্টে টানা ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন।
মিরাজের বিরল এই কৃতিত্বের পরপরই ৫২ রানে জো রুটকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তাইজুল ইসলাম। ইংল্যান্ড ইনিংসের এটাই সর্বোচ্চ রান।
মনে হয়েছিল লাঞ্চের আগেই অল আউট হয়ে যাবে ইংল্যান্ড। কিন্তু ওকস ও আদিল রশিদ দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান। ৮ উইকেটে ১৬৩ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।
লাঞ্চের পরও বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়ে সহজে রান তুলতে থাকেন তারা। বারবার বোলিং পরিবর্তন করেও লাভ হাচ্ছিলো না। লাঞ্চের পর প্রথম ড্রিঙ্কের সময় ২২০ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড, সেই আট উইকেটেই। বাংলাদেশের লিড নেওয়ার স্বপ্ন শেষ।
২২০ ছাড়িয়ে ২৪০। ওকস- আদিল রশিদের বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে শুধু হতাশাই বাড়ছিল। অবশেষে জুটি ভাঙলেন মিরাজ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওকস করে ফেলেছেন মহামূল্যবান ৪৬ রান। ইংল্যান্ড ২৪৩, ৯ উইকেটে। পরের ওভারেই ফিনকে ০ তে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। ২৪৪ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
৮২ রানে ৬ উইকেট নেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, ৮০ রানে।তাইজুল ৬৫ রানে নেন ৩ উইকেট।