রাস্তায় থাকব, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছেও যাব : ওবায়দুল কাদের

0
1980
গড়াইনিউজ২৪.কম:: আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে আমি আমার পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। এটি আমার জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। দায়িত্ব পালনে আমি দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘাম-শ্রম-মেধা-শক্তি-সামর্থ্য সবকিছু উজাড় করে দেবো। নেতৃত্বের আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দায়িত্ব সুবিশাল। তবে এখন আমার সুবিধা হবে। আমি এখন রাস্তায় যাব, তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের কাছেও যাব। মন্ত্রণালয়ের কাজের কারণেই এখন তার তৃণমূলে  পৌঁছে সরকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলের সমস?্যা মেটানো সহজ হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমন্ডির একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আমি আগে রাস্তায় যেতাম, রাস্তার কাজ করতাম। আমার পার্টির লোকেরা কিছু কিছু সমস?্যা নিয়ে কথা বলত, অভিযোগ ও নালিশ করতো। কিন্তু তখন আমি অথরিটি ছিলাম না বলে সমাধান দিতে পারতাম না, শুধু শুনতাম। এখন আমি তাত্ক্ষণিক সমাধান দিতে পারব, প্রয়োজনে মোবাইলে দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলে বা অন্য কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে স্পটেই সিদ্ধান্ত দিতে পারব।  সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দেশবাসী, তৃণমূল নেতাকর্মী ও সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান নবনির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের নিজেকে আঞ্চলিকতা (ইজম)’র ঊর্ধ্বে রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি কোনো অঞ্চলের নই, আমি সমগ্র বাংলাদেশের। এখানে আমি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করলে আমাকে কৈফিয়ত দাখিল করতে হবে।  তিনি বলেন, আমাকে এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নেত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন আমি আমার সবটুকু দিয়ে সেই আস্থা ধরে রাখতে চাই। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি তখন একটি অঞ্চলের স্লোগান শুনেছি। দুই-একদিনের মধ্যে দলের সম্পাদকীয় পদ ও তিন-চারদিনের মধ্যে সদস্য তালিকা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আর একসপ্তাহের মধ্যে পুরো কমিটিই পেয়ে যাবেন। আওয়ামী লীগের কমিটির জন্য আপনাদের চার মাস অপেক্ষা করতে হবে না। তা ছাড়া আমরা বিএনপির মতো জাম্বোজেট সাইজের কমিটিও দেব না।
সৈয়দ আশরাফের নাম প্রস্তাবকে ‘চমক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, চমক এটাই ছিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। এটাই হলো শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর (সৈয়দ আশরাফ) দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) মন্ত্রিসভায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দেখলাম। তিনি একদম বিচলিত নন। তাঁর মধ্যে কোনো হতাশা নেই। তিনি এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবত্ কালের আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন সবচেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত বড় একটি সংগঠন, হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দিলেন, অথচ টু শব্দটিও হলো। এতেই প্রমাণিত আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল দল। বিশ্বের ১০টি দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দলের ৫৫জন নেতা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে আরো সুসংগঠিত করবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের আচরণ সামনে আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে। নিজেদের বদলাতে না পারলে আমরা দেশের পরিবর্তন করতে পারবো না। আমাদের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। সম্মেলনের পর দলের সামনের এজেন্ডা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুটি এজেন্ডা হাতে নিয়েছি। এক সাম্প্রদায়িক পরাশক্তিকে পরাজিত করা। দুই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করবো।
বিএনপি’র এই কমিটিকে অভিনন্দন জানানোর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যাপার। তবে তাদের শুভেচ্ছা অভিনন্দন মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারতাম যদি তারা আমাদের সম্মেলনে আসতো। তারা কথা দিয়ে কথা রাখলেন  না। সম্মেলনে আসলে তাদের কেউ বলতো না, ‘ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়’। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তার খেসারত দিচ্ছে। সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোথাও বিরোধী দলের স্ট্যাটাস নেই। আবার যদি তারা ভুল করে তবে ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকতে হবে তাদের। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের নবগঠিত আংশিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতা আহমদ হোসেন, ড. হাছান মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গড়াইনিউজ২৪.কম নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী  ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর নিজ জেলা নোয়াখালীতে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।