করোনাভাইরাসে এখন মৃত্যু বেশি ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেলায়!

0
525
জেলাওয়ারি হিসাবে গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা জেলায়, ১৬১ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০১ জন মারা গেছেন কুষ্টিয়ায়।

তামান্না ইসলাম ইভা: গড়াইনিউজ২৪.কম:: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহ এক সপ্তাহ পার করল বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার দেশে সংক্রমণের ৭০তম সপ্তাহ (৪-১০ জুলাই) শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭৩ হাজার ৫৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৭৭ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সোয়া এক বছর ধরে চলমান এই মহামারিতে এমন পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছিল সরকার। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। জুনের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। বিশেষ করে খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপ আকার ধারণ করে। রাজশাহীতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও খুলনায় এখনো পরিস্থিতি খারাপ। বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহে (৪-১০ জুলাই) প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ৪৩৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮২ জনের। এই সপ্তাহে মৃত্যুর দিক থেকে খুলনা ও ঢাকার পর আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ। টানা চার দিন দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি থাকার পর গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৭৭২ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন রোগীর সংখ্যা কমলেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমেনি। সে হিসাবে বলা যায়, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তুলনামূলক পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ হাজার ৮৮৪ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ৫১ জন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সংক্রমণে এসব বিধিনিষেধের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বিধিনিষেধের প্রভাব চলতি সপ্তাহ থেকে দৃশ্যমান হতে পারে। চলতি সপ্তাহ থেকে সংক্রমণে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে মৃত্যু কমতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৯ জন। আর মারা গেছেন ১৬ হাজার ১৮৯ জন।জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সংক্রমণ সাময়িক ধীর করা যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য লকডাউনের পাশাপাশি রোগী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা বাড়িয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।