শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদী বৈঠক আজ

0
2592
গড়াইনিউজ২৪.কম:: দীর্ঘ সাত বছর পর চারদিনের ভারত সফরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও একান্ত বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। এই সফরে ঢাকা-দিল্লির বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক আরো বহুমাত্রিক রূপ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সফরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর আগে শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘আকাশ প্রদীপ’ নয়াদিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছায়। সেখানে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর কথা ছিল ভারতের হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড পাবলিক এন্টারপ্রাইজ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর। কিন্তু সবাইকে অবাক করে প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির হন স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিমানের গেটে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ ঘটনাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে ‘একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি উষ্ণ অভ্যর্থনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর কুশল বিনিময়ের পর শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন মোদী সরকারের বাঙালি প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এ সময় দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদী। বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় রাইসিনা হিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে। এই সফরে সেখানেই থাকবেন তিনি। পরে শেখ হাসিনার হাতে ফুল তুলে দেয়ার ছবি টুইট করে মোদী লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পেরে তিনি আনন্দিত। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি সংকল্পবদ্ধ। আজকের বৈঠকে আলোচনার পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত্ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বাংলাদেশ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট ভারতের রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করা হবে। নয়াদিল্লির মানেক শ সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণোত্সর্গকারী ১৬৬১ জন ভারতীয় সেনা সদস্যের মধ্যে সাতজনের নিকটাত্মীয়ের হাতে প্রধানমন্ত্রী ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক’ ও সম্মাননাপত্র তুলে দিবেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বক্তব্য রাখবেন। সফরের প্রথম দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাই কমিশন এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয়রা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার আজমির শরীফে যাবেন ও সেখানে মাজার জিয়ারত করবেন। এছাড়া ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতির দেয়া রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ব্যবসায়ীদের একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে সকালে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ওই বিকালে ঢাকায় ফিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে দিল্লি শহরকে সাজানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়ক ও প্রান্তে উড়ছে দুই দেশের পতাকা।