অনিয়ম আর দূর্নীতির নাম ভেদরগঞ্জের চরভাগা আক্কাছ হাওলাদার বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

0
1679

আবু রায়হান (বর্ষন),শরীয়তপুর প্রতিনিধি, গড়াইনিউজ২৪.কম:: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চরভাগা আক্কাছ হাওলাদার বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তার স্ত্রী সাবিনা হকের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়ম ও দূর্নীতি অভিযোগ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী সাবিনা হকের দূর্নীতির কারনে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান নিম্ন থেকে নিম্নতর হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেট পড়ানো, দেরী করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া ও উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতেরর ঘটনা এখন জনগনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সদস্য সেফালি বেগম জানায়, স্বামী প্রধান শিক্ষক হওয়াতে মনের খুশিমত স্কুলে আসে তার স্ত্রী সাবিনা হক। স্কুলের সময় সাড়ে নয়টা থেকে নির্ধারিত থাকলেও কখনো সাড়ে ১০টায় কখনো ১১টায় উপস্থিত হয়। প্রায় একবছর আগে সাবিনা হক সুখি নামে এক ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করায় বিদ্যালয় ছেড়েছে মেয়েটি। ছাত্রীর মা আছমা বেগম জানান, আবুল স্যারের বউ সাবিনা ম্যাডাম আমার মেয়েডারে “মরিচ তুলনির মেয়ে” বলে গালি দিছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়ে ডারে অনেক বুঝাইছি কিন্তু আজও পর্যন্ত লজ্জায় স্কুলে আসেনা। বিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রের বাবা মোটর সাইকেল চালক জসীম কাজী বলেন, আবুল মাস্টারের দূর্নীতি সীমা ছাড়াইছে, আমার দুই ছেলে বিদ্যালয়টিতে পড়ে, কিছুদিন আগে উপবৃত্তির ১২০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও দিছে ৬০০ টাকা। বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সদস্য সিদ্দিক হাওলাদার জানায়, অনেক বাধার মধ্যে দিয়ে আমরা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি, কিন্তু কি পেলাম, হেড মাস্টার আর তার স্ত্রী সাবিনা হকের দূর্নীতির কারনে স্কুলটি আজ মেধা শূন্য। আজও একটি বৃত্তি পায় নাই। উন্নতিতো পরের কথা বরং অবনতিই ঘটছে দিনের পর দিন। দিনের পর দিন স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুলের কক্ষে অবৈধ ভাবে কোচিং করিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছিল সাবিনা হক। স্থানীয় অলি, জসীম, আবু তাহের ও রাজিব সহ কতিপয় সচেতন লোকের বাধার মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন। বাধা দানকারী অলি মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করাতো প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সাবিনা হক, আমরা বার বার মৌখিক ভাবে বললেও তারা কর্ণপাত করে নাই, পরে আমরা বন্ধুরা মিলে সরাসরি বাধা দিলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানায়, স্বামী প্রধান শিক্ষক হওয়াতে সাবিনা ম্যাডামকে কিছু বলেও লাভ হয় না, অনেক আগে থেকেই তিনি ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোচিং করান। উপবৃত্তির ছবি তোলার ক্ষেত্রেও আবুল হোসেন দূর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছু স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ছাত্র-ছাত্রীরা যেখানে খুশি উপবৃত্তির ছবি তোলবে, কিন্তু আবুল স্যার দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ করে স্কুলের মধ্যে স্টুডিও এনে সবাইকে ছবি তোলতে বাধ্য করে এবং দ্বিগুন টাকা নেয়। আলাপ করা হয় স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আক্কাছ হাওলাদারের সাথে তিনি বলেন, আমি অনেক কষ্টে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু স্কুলের কোন খবর আমাকে জানানো হয় না। আয়, বরাদ্দ সবই আবুল মাস্টার নিজে বুঝে নেন। কিছু দিন আগে স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৪০ হাজার টাকা আসে কিন্তু কিভাবে খরচ হল আমি জানিনা। রাগের মাথায় স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দূর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি ও আমার স্ত্রী এসব অভিযোগের কোনটিই করিনি। দ্বন্ধের কারনে প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম খান জানায়, ঘটনাটি আমার জানা ছিলনা গতকাল একজন ঘটনাটির ব্যাপারে অবগত করেছে। দূর্নীতি ও অনিয়ম যদি সত্য হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনকে মৌখিক ভাবে বার বার জানানো হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জালালউদ্দিন খান মুঠোফোনে বলেন, বিদ্যালয়টিতে সংগঠিত কোন প্রকার দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আমরা পাইনি। অবশ্যই দূর্নীতির ও অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করে অভিযুক্তদের ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।