পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার অপচেষ্টা চালানো

0
479

গড়াই নিউজ ২৪.কম::দেশে এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে। শতভাগ ঘাটতি হয়তো মিটবে না, তবে ঘাটতির পরিমাণ এবছর অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় কম হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে দেশের পেঁয়াজের বাজারে। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎই কয়েকদিন পরপর পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তোলার একটা অপচেষ্টা চালানো হয়। এতে পেঁয়াজের দাম মাঝে মধ্যেই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। এতে কখনও কেজিতে ৫ টাকা আবার কখনও ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ে।  ধারণা করা হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে এ কাজটি করছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের একটি বড় অংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, আড়তদার, ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, মৌসুমের সব পেঁয়াজ মাঠ থেকে কৃষকের ঘরে উঠে এসেছে। বাজারজাত করা হচ্ছে সেসব পেঁয়াজ। বাজার এখন দেশি পেঁয়াজে সয়লাব। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজও রয়েছে বাজারে। কাজেই কোনও অজুহাতেই পেঁয়াজের সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়নি। তারপরও কখনও রমজান, কখনও লকডাউন, কখনও রাস্তায় গাড়ি না চলা আবার কখনও বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে সুবিধাবাদী মুনাফাখোররা পেঁয়াজের কেজিতে দাম বাড়িয়েছেন ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা। আবার সীমান্তে বন্দরগুলোয় যখন ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়েছে, সেই সুযোগ দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন এসব সুবিধাবাদী মুনাফা খোররা।

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্য মতে জানা গেছে, ঈদের সময় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ঈদের পর কোনও পেঁয়াজের দামই বাড়েনি। বরং ঈদের পর খুচরা পর্যায়ে রবিবার (১৬ মে) থেকে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৭ শতাংশ কমেছে। যা আমদানি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ঈদের আগে অর্থাৎ ১২ মে বেড়েছে ৭ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ এখন আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় বেশি। ক্রেতাদের দাম নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। তাদের দাবি, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা তৈরি করেন আমদানিকারকরা। তারাই গুজব ছড়িয়ে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এবছরও সেই পায়তারা করছে। কিন্তু এ বছর তারা সফল হবে না, কারণ এবছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। অপরদিক আমদানিও অব্যাহত রয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়ত থেকে যে দাম তোলা হয়, সেই দামেই আমরা কিনতে বাধ্য হই। কারণ, আড়তের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা সব একজোট হয়ে একটা দাম ফিক্সড করে। যা সবাই অনুসরণ করে। ফলে আড়তের দরের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নাই। পেঁয়াজ নিয়ে যা কিছু হয়, তা আড়তেই হয়। আড়তের বাইরে কোথাও কোনও কারসাজির সুযোগ নাই।

তবে আড়তদাররা এসব বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত করে জানিয়েছেন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সঠিক নয়। যখন যে দাম ওঠে, সেই দামেই আড়ত থেকে পেঁয়াজ ছাড়তে হয়। এখানে মনোপলির কোনও সুযোগ নাই। তারা জানিয়েছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সেদেশে নির্ধারিত দরই এখানে প্রযোজ্য। সেই দরের সঙ্গে নানাপ্রকার ট্যাক্স পরিশোধ করে পরিবহন খরচ ও মুনাফা যুক্ত করেই বিক্রি করতে হয়। পেঁয়াজের বাজারটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতা পূর্ণ। অপরদিকে পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য বিধায় এর মজুদ নিয়ে সময়ক্ষেপণও সম্ভব নয়।

এদিকে রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তারা পরিবহন খরচ ও কেজিতে ২ থেকে ৪টাকা মুনাফা যুক্ত করে বিক্রি করেন। খুচরা বাজারের কেউ মজুতদারিও করে না। মনোপলিও করে না। আমরা প্রতিদিন যা আনি, তাই দিনে বেচে বাড়ি যাই। যা মুনাফা হয়, তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি।

কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া জানিয়েছেন, পেঁয়াজ পচনশীল বিধায় এ পণ্যটি বেশিদিন মজুত রাখা যায় না। এ ছাড়াও পণ্যটি নিত্যপণ্য বিধায় দ্রুতই বিক্রি করতে হয়। আসলে পেঁয়াজ নিয়ে যা কিছু হয়, তা আমদানি পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করে। সীমান্তের দামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ জানিয়েছেন, ভারতের সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে সেদেশ থেকে রফতানি হওয়া পেঁয়াজের দাম। এখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তিনি আশা করেন, এ বছর পেঁয়াজের কোনও সংকট নাই। চাহিদাও স্বাভাবিক। বাড়তি কোনও চাহিদা নাই। তাই সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিকই থাকবে। কাজেই এ নিয়ে দুশ্চিন্তারও কোনও কারণ নাই, যদি ভারত থেকে কোনও অশুভ সংবাদ না আসে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পর ক্রেতা কম। পেঁয়াজের চাহিদাও কম। ঈদের পর যেটুকু চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা দেশি পেঁয়াজেই পূরণ করা যাচ্ছে। ঈদের আগের দিন ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দেশে পেঁয়াজের কোনও সংকট নাই। আমদানি পরিস্থিতি ভালো। এ নিয়ে সংকটের কোনও সম্ভাবনা নাই।

উল্লেখ্য, গতবছর দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৭ থেকে ২৫ শতাংশ প্রসেস লস বাদ দিয়ে মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাড়ায় ১৯ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। তাই বছরে ঘাটতি দাঁড়ায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন। এই পরিমাণ পেঁয়াজই ভারত থেকে আমদানি করেন দেশি আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। কোনও কারণে আমদানি পরিস্থিতিতে ঝামেলা সৃষ্টি হলেই বাজার অস্থির হয়। যার প্রভাব দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ওপরেও পড়ে।

শারমিন আক্তার সোমা/গড়াই নিউজ ২৪.কম::