‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচন: রিজভী

0
2074

গড়াইনিউজ২৪.কম:: তিন সিটি করপোরেশনের ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে না দাবি করে একে ‘হাসিনা মার্কা নির্বাচন বলেছেন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী। ভোট চলাকালে সোমবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংসাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। সরকার ‘অবৈধভাবে’ ক্ষমতায় থেকে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘এরা কখনই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেবে না।’ ‘কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়া, জালভোটে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার ‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচনকে বাংলাদেশের নির্বাচনের মানদণ্ড করা হয়েছে।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিনই এই মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন হবে।’ ‘ক্ষমতাসীনরা অহংকার আর উন্মত্ততায় বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ক্ষমতামায়ায় হিংস্র হয়ে নির্বাচনী বিজয় জোর করে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে। আর আত্মা বিক্রিকারী নির্বাচন কমিশন ভোট শেষে অনুশোচনাহীন চরম মিথ্যাচার করে বিবৃতি দেবে।’ ‘অবৈধ সরকারকে খুশি করতে নির্বাচন কমিশন নিজেদের স্বাধীন ক্ষমতাকে নিজেরাই হরণ করেছে। নির্বাচন কমিশন এখন একটি প্যারাসাইট (কীট)। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিপক্ষ।’  বহুল আলোচিত তিন মহানগর রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে ভোটের আমেজ অবশ্য কেবল এই শহরে সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশেই দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা জানতে চান, তাদের অবস্থান এখন কোথায়। কে বেশি জনপ্রিয় দেশে। সংসদ নির্বাচনের বছরে স্থানীয় এই নির্বাচনে তাই এসেছে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন সিটিতেই বিপুল ভোটে ধানের শীষ জিতবে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘যদিও তিন সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত এখনও পর্যন্ত নেই, তবুও ভোটারদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবে ধানের শীষের প্রার্থী।’ ভোটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, ‘রাজশাহীতে ওসি কামাল মিজানুর রহমান মিনুকে ধাক্কাধাক্কি করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। দাসমারীতে ধানের শীষের সমর্থক বজলুর রহমান মন্টু, রাজীববহ বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।’ ‘প্রায় সকল কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।…রাজশাহীর বিএনপির ধানের শীষের ২৪ জন এজেন্ট নিখোঁজ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’  ‘বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজ ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ভোট শুরু হওয়ার এক ঘন্টা পরে বের করে দেয়া হয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সকল এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী গার্লস গাইড কেন্দ্রে সকল এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ড ১৮, ২১, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯, ৩০ নং ওয়ার্ডের প্রায় সকল এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’ রিজভী বলেন, ‘যেখানে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, সেই ওয়ার্ডগুলো থেকে বিএনপির সকল এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’ ‘একই অবস্থা বরিশালেও ঘটেছে। মজিদুন নেসা ভোট কেন্দ্রে এবং বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধানের শীষের ব্যাজ লাগিয়ে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টরা কাজ করছে। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।’ ‘উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রশাসনের নেতৃত্বে ধানের শীষের সব এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিকে জেলা ছাত্রলীগের নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ধানের শীষের সকলে এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে। ৩০ নং ওয়ার্ডে কাশিপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে পুলিশের সহায়তায় উজিরপুর পৌর মেয়র এর নেতৃত্বে প্রায় ২০০ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে কেন্দ্র থেকে।’ ‘ওয়ার্ড নং ২৯, ওয়ার্ড ৯, ওয়ার্ড ৭ আসমত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কাউনিয়া স্কুল, কাউনিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, আদর্শ মাতৃমন্দির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকল বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’ ‘এছাড়া বাসদের মেয়র প্রার্থী মণীষাকে শারীরিকভঅবে আঘাত করে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’ সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়েও একই অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘সিলেটের ২০ নং ওয়ার্ডে এমসি কলেজ কেন্দ্রে সকাল ৮.৪৫ মিনিটে দিপক রায়, টিটনসহ ধানের শীষের সকল এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’  ‘২১ নং ওয়ার্ডে সকল এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, ২০ নং ওয়ার্ডের হাতিম আলী হাইস্কুলে সকল এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ২২, ৮ নং ওয়ার্ডের সকল ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’ রিজভী বলেন, ‘গাজীপুর ও খুলনায় নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) কথা দিয়েছিল আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে। কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হলে কমিশনের পুরনো চেহারা আবারও ফুটে উঠতে শুরু করে। তারা রাখঢাক না করে মুখোশের শেষ সুতোটুকুও খুলে ফেলেছে।’ ‘যেভাবে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্বাচনী এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি এবং ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টদের এলাকাছাড়া করা হয়েছিল, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যাচ্ছে তিন সিটি এলাকায়।’ ‘তিন সিটি নির্বাচনেই অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে মর্মর মনুমেন্টের (সৌধ) মতো নিশ্চুপ থেকেছে নির্বাচন কমিশন, প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা করেনি। তাদের মনে-মস্তিস্কে অন্ধকার নেমেছে বলেই যুক্তি সেখানে অবান্তর। নিজেদের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ না করে মনে হয় সরকারি হুকুমের ভয়ে অসহায় নীরব-নিশ্চল পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তারা।’