দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে  শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে!

0
2202

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফিরে, গড়াইনিউজ২৪.কম:: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট সহ ১০ জেলার দিন দিন শিশুশ্রমের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র, অশিক্ষা, পারিবারিক বিচ্ছেদ, বড় পরিবার ছাড়াও পারিবারিক বিভিন্ন আর্থিক সমস্যার সৃষ্ট শিশুরাই মূলত হয়ে উঠছে শিশুশ্রমিক। আমাদের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের পাঠানো তথ্যর ভিতিতে জানা যায় সরেজমিনে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এদের বড় একটি অংশ মাদক সেবন, বিক্রি ও বহনের পেশায় লিপ্ত রয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশে ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স তাদের শিশু হিসাবে চিহ্নিত করেছে। শ্রম সংস্থার হিসাবে যে সব কাজ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সে ক্ষেত্রে শ্রম নিয়োগের বয়স কোনো অবস্থাতেই ১৮ বছরের কম হবে না। হালকা কাজের ক্ষেত্রে এদের ১৮ বছরের নীচের শিশুদের নিয়োগ করা যাবে। আইএলওর তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকরা ৩৪৭ ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৪৭ ধরণের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে ব্যাটারী, রাসায়নিক কারখানা, যৌন কর্ম, পরিবহন খাত, ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করা, লেদ মেশিন, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ, অটো মোবাইল কারখানা, রিক্সা ও ভ্যান চালানো, বিল্ডিংয়ের রাজমিস্ত্রীর কাজ, জুয়েলারি শিল্পে কারিগরের কাজ, চাল ও মসলার কারখানায় কাজ, মাদক দ্রব্য বিক্রি, অস্ত্র বহন ও চোরাচালানি ইত্যাদি। সমাজের বিশিষ্ট জনদের মতে, পারিবারিক ও আর্থ সামাজিক মূল্যবোধের কারণে ৬ থেকে ৭ বছর বয়সেই বাংলাদেশের শিশুদের বড় একটি অংশ জীবন ধারনের জন্য শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। দারিদ্রের জন্য এদের অনেকেই স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বাসস্থান, শিক্ষা, বিনোদন ও জীবনের নিরাপত্তা লাভের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। রাত জেগে এদের মাঝে মধ্যে কাজ করা অবহেলা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করা, কম মুজুরী, মালিকের দুর্ব্যবহার, পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাব এবং দীর্ঘ সময় ধরে বড়দের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করার ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এইসব শিশুরা। শুধু তাই নয় নানা ইনফেকশন, চর্মরোগ, চোখের সমস্যা, শ্রবণ সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়া ও মাথা ব্যথাসহ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এরা। জেলায় প্রতি ১০জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু শ্রমিক রয়েছে। এসব শিশু বিভিন্ন দোকান, হোটেল রেস্তোরা, ওয়ার্কসপ, কারখানা, ভান্ডারির দোকান, টেম্পো, গাড়ীর হেলপার, নির্মাণ ও কাঠমিস্ত্রির হেলপার, বসত বাড়ীতে কাজ, বাদাম, চকলেট বিক্রির কাজ, চটপটির দোকানসহ ভ্রম্যমান খাবার পানির দোকানে শ্রম দিচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এরা মাদক গড ফাদারদের মাদক বহনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে ও মাদক সেবন ও যৌন পেশায় অনেকে লিপ্ত রয়েছে। যে বয়সে হাতে ব্যাগ    নিয়ে স্কুলে যাওয়া কথা সে বয়সে ভ্যান চালক বাবু (১২)  বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শহরের ছেলে। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত  ভ্যান গাড়ী  চালাতে হয়। সংসারে আর্থিক অনটন, মা মানুষের বাড়ীতের ঝি এর কাজ করে তাই বাধ্য হয়ে আমাকে পড়ালেখা না করে এই পথে নামতে হয়েছে। শুধু বাবুই নয় জেলা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা, এদের দেখার কেউ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। কেননা, অনেক শিশুর জীবনে বেঁচে থাকার পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রম বিনিয়োগ করা। তার পারিবারিক অস্বচ্ছলতা তাকে বাধ্য হয়ে শ্রমিক করে তোলে। কিন্তু আমরা জানি প্রতিটা শিশু জন্মগ্রহণ করে স্বাভাবিক কিছু অধিকার নিয়ে। এই অধিকারগুলো আইন দ্বারা রক্ষিত থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে দিতে পারছি না সুন্দর একটি জীবনের স্বপ্ন। সুন্দরভাবে বিকাশের জন্য প্রতিটি শিশুর প্রয়োজন হয় পরিচর্যা ও আদর ভালোবাসা। লেখাপড়া ও খেলাধুলা শিশুর জন্য একান্তভাবে জরুরি। যে শিশু এইসব থেকে বঞ্চিত হয়, যার শৈশব থেকে কেড়ে নেওয়া হয় আনন্দমুখর দিনগুলোকে, তার নিকট থেকে এ সমাজ বঞ্চিত হবে বৃহৎ কোন কল্যাণের। আমরা আমাদের এই সম্পদকে যথাযোগ্যভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা যদি করি, তবেই একদিন এ দেশে মানুষ সাফল্য অর্জন করবে। দেশ হবে সোনার বাংলা। তাই  শিশুশ্রম প্রতিরোধে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। আজকের শিশু, আগামীর ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের স্বার্থে প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।।