জঙ্গীবাদ রুখতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহকে বড় প্রয়োজন: সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী

0
1974

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির বারাম খানার আখড়া বাড়ীতে বসেছে সাধূর হাট। বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাহের ১২৬ তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবসের অনুষ্ঠানমালা ও লালন মেলার উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। এসময় তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ আমি এ ধারাতেই বিশ্বাস করি।
মন্ত্রী বলেন, সকল ধর্মের সহাবস্থানের কথা বলেছেন বাউল সম্রাট লালন শাহ। প্রকৃত ধর্ম পাশাপাশি বন্ধুর মতো, ভাইয়ের মতো বসবাস করতে শেখায়। আর তার শেখাগুলো যদি আমরা মানতে পারি তাহলে সমাজের হিংসা, হানাহানি, মারামারি, অন্যায় কাজগুলো দুর করতে পারি। এজন্যই জঙ্গীবাদ রুখতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহকে বড় প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান।
তিরোধান দিবস উপলক্ষে আখড়াবাড়ি পরিণত হয়েছে সাধূ-গুরু-বাউলদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ‘পারে লয়ে যাও আমায়’ এ স্লোাগানে ও সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছে সাঁইজির মাজারে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী প্রতিবার তিনদিনের এ উৎসব পালিত হলেও মাঝে বেশ কয়েকবছর ধরে তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছিলো। আবার তা ফিরিয়ে এনে আবার ৩ দিনে করা হয়েছে। তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালাকে সাজানো হয়েছে ৩ দিনব্যাপী। মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৫/৬ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছে সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, পিপি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, জিপি এ্যাড. আক্তারুজ্জামান মাসুম, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। আলোচক ছিলেন লালন একাডেমীর এ্যাডহক কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সদস্য সচিব আতিকুল্লাহ মামুন।
সভাপতির বক্তব্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন, শুধু বাহ্যিকতা নয়,মনে প্রানে লালনের দর্শন ও বাণীকে ধারন করতে পারলেই কেবল আমরা অসাস্ম্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে পারবো। অনুষ্ঠানের আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে র‌্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পীরা।