কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল!

0
293

পটুয়াখালী প্রতিনিধি, গড়াইনিউজ২৪.কম:: ঈদ পরবর্তী ছুটিতে পর্যটকদের পদচারনায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের লীলাভূমি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরবর্তী সময়ে টানা ছুটিতে দিনরাত মুখরিত পর্যটন স্পটগুলো। করোনার পরে কুয়াকাটা যেন তার সরূপে ফিরেছে। কিছুটা হলেও করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হোটেল মোটেলসহ সকল ব্যবসায়ীরা। ঈদের লম্বা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুরা যান্ত্রিক শহর এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একটু ক্লান্তি দূর করতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন কুয়াকাটায়। বিদেশী পর্যটকরাও এখানে ঘুরতে এসেছেন। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ও দেখভাল করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের টানা ছুটি পেয়ে হোটেল-মোটেলের রুম প্রায় পরিপূর্ণ করেছে রেখেছেন পর্যটকরা। ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটক সমাগম শুরু হয়েছে।  কুয়াকাটা গ্রীন ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কুয়াকাটা সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট এর পরিচালক আবুল হোসেন রাজু জানান, পর্যটকদের গাইড করতে আমাদের গাইডগুলো আগে থেকেই বুকিং ছিল। তাই গাইডের সদস্যরা পর্যটকদের সেবা দিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণ করতে স্পিড বোটগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। ঈদের পর থেকেই মূলত পর্যটকদের পদভারে দিনরাত মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান নারিকেল বিথী, ফয়েজ মিয়ার বাগান, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার। ভ্রমণের জন্য রয়েছে সুন্দর বনের পূর্বা ল খ্যাত কুয়াকাটার পশ্চিমে ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনমুগ্ধকর সমুদ্রের বুকে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার বেলাভূমি সব স্থানেই পর্যটকরা ঘুরে বেরাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে।

খুলনা থেকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা চার বন্ধু মিলে ঈদের পরে এই প্রথম কুয়াকাটায় ঘুরতে আসলাম। অনেক মজা করছি। সাগরের বিশালতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পর্যটন স্পটগুলো ঘুরছি। সৈকতের বালিয়াড়িতে সময় কাটাচ্ছি। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। নড়াইল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক মশিউর রহমান জানান, আমরা পরিবারের সকলে এবার ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসেছি কুয়াকাটায়। আসলে স্থানটি মনোমুগ্ধকর। এখানে দীর্ঘ সী-বিচ, বিশাল জলরাশি। সীমা বৌদ্ধ বিহার, ফাতরার বন, ঝাউবাগান ঘুরলাম। বেশ ভালই লাগছে। এখানে না আসলে বোঝাই যায় না প্রকৃতির অপরূপ শোভা।কুয়াকাটা ভূইয়া মার্কেটের সভাপতি মো. নিজাম জানান, করোনার দুই বছরে পর্যটকরা তেমন আসেনি কুয়াকাটায়। তবে এ বছর ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় হয়েছে। ছোট-বড় দোকানীরা পর্যটকদের কাছে বেচা বিক্রি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েকদিন যদি লোক সমাগম থাকে তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোশিয়েসন সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, হোটেল মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পর্যটকদের সুবিধার্থে সকল ধরনের সেবা ও নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। এখানে শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে ঈদ পরবর্তী সময়ে ছুটিতে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পর্যটকদের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঈদের পরের দিন বিকেল থেকে বেশ কিছু পর্যটন বাহির থেকে এসেছে। কিন্তু রাতে ঢাকাসহ অন্যন্য স্থান থেকে বেশ কিছু পর্যটক এসেছে। হোটেল মোটেল, কটেজ বুকিং আছে। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি মো. আবদুল খালেক জানান, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবকটি স্পটে কয়েক স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছেন। এছাড়াও মেডিকেল টিম ও ফায়ার সাভির্সের একটি দল এবং ভ্রাম্যমান আদালতের একটি টিম সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করছেন। দেশী পর্যটকের সাথে বিদেশী পর্যটকও ঘুরতে এসেছে কুয়াকাটায়। বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে এমন বিষয়টি মাথায় রেখেই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আগেই সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সভা করে প্রস্তুতি নিয়েছি। খাবার হোটেলগুলোয় মূল্য তালিকা রাখতে বলা হয়েছে যাতে পর্যটকরা প্রতারিত না হয়। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদলতের একটি টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল।