শরীয়তপুরে ১০ টাকা মূল্যের চাউল বিতরণে অনিয়ম !

0
1975

আবু রায়হান (বর্ষন), শরীয়তপুর থেকে, গড়াইনিউজ২৪.কম::  শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ না করে অন্যত্র বিক্রি করার পরেও মাস্টার রোল জমা দিয়েছে ডিলাররা। এলাকার কার্ডধারী গরীব জন সাধারণ চাল না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পরেছে। অথচ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমাকৃত চাল বিতরণ মাস্টার রোলে দেখা গেছে চাল বিতরণ হয়েছে এবং ডিলার ও ট্যাগ অফিসার স্বাক্ষর রয়েছে মাস্টার রোলে। ডিলারগণ চাল বিতরণ করেছে বলে দাবী করলেও ট্যাগ অফিসাররা বলে চাল বিতরণ করতে দেখেনি ট্যাগ অফিসাররা। ডিলারের কথামতো মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করেছে ট্যাগ অফিসার। তথ্য সংগ্রহ করার সংবাদ পেয়ে ডিলাররা প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দেয় ফোনে। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ তালিকা প্রনয়ন কমিটির সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান। সদস্য সকল সাধারণ ও মহিলা মেম্বারগণ। সদস্য সচিব ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। তালিকা যাচাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। গরীব কার্ডধারীদের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে দবির উদ্দিন তালুকদার ও ফিরোজ খানকে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ৭১৩ জন কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ১০ হাজার ৬৯৫ কেজি চাল উত্তলন করেন ডিলাররা। একই মাসের ২৮ তারিখ সমপরিমান চাল উত্তোলন করেন খাদ্য গুদাম থেকে। কার্ডধারী গরীব জনসাধারনের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চন্দ্রপুর ইউনিয়ন এলাকায় ডিলার দবির উদ্দিন তালুকদার ও ফিরোজ খান গত সেপ্টেম্বর মাসে ২দফায় ২১ হাজার ৩৯০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। প্রথম দফার ১০ হাজার ৬৯৫ কেজি চাল বিতরণ করে ১৯ সেপ্টেম্বর । আর ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় উত্তোলন করা ১০ হাজার ৬৯৫ কেজি চাল কার্ডধারীদের মাঝে বিক্রি না করে বেশীদামে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। কার্ডধারীদের কার্ড ডিলারগণ আটক করে রাখে। ৩ অক্টোবর যে চাল উত্তোলন করা হয় তা ৪ অক্টোবর বিতরণের সময় কার্ডধারীদের কাছ থেকে ৩টি টিপসই নিয়ে নেই ডিলাররা। ২ বার চাল গ্রহন করে ৩ বর টিপসই নেয়াতে কার্ডধারীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখনই প্রকাশ পায় ডিলারগন ২৮ সেপ্টেম্বরর চাল উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। বাহের চন্দ্রপুর এলাকার মৃত আবু সরদারের ছেলে কার্ডধারী ফেরদৌস সরদার, দক্ষিন চন্দ্রপুর এলাকার নোয়াবালী সরদারের ছেলে কার্ডধারী রফিক, লেফান ফকিরের ছেলে কার্ডধারী আজিজ ফকির, গাজীপুর এলাকার মৃত আনছু মাদবরের স্ত্রী কার্ড নং ২৬৯ আমেনা বেগম, আকবর মাদবরের স্ত্রী কার্ড নং-২৬৮ রিনা বেগম, আবুল হোসেন মাদবরের স্ত্রী কার্ড নং-২৫৪ লাকি বেগম সেপ্টেম্বর মাসে ডিলারদের কথামতো ১৫ কেজি চাল পেয়েছে। অন্যত্র মাপার পরে দেখেছে ১২ কেজি চাল হয়েছে সেখানে। ডিলাররা ৩ বার চাল উত্তোলন করলেও কার্ডধারীগণ চাল পেয়েছে ২ বার। চন্দ্রপুর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ রিপন সিকদার, ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার লালু খা, ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল মৃধা বলেন, ডিলারগণ গরীবের চাল বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে এলাকায় বারবার দরবার শালিশী হয়েছে। চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মোল্ল্যাও এর কোন সমাধান দেয়নি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক আর গরীব অসহায় সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাক। তাদের নাম করে যেন কোন ডিলার প্রতারণার সুযোগ না পায়। ডিলারগণ তাদের গুদাম থেকে চাল বিতরণ না করে পরিষদ ভবনে নিয়ে খেয়াল খুশিমতো চাল বিতরণ করে। এতে প্রত্যেক কার্ডধারীর ২-৩ কেজি চাল কম পায়। আর একবারের চালতো ডিলাররা বিক্রি করেই খেয়েছে। ডিলার দবির উদ্দিন তালুকদার ও ফিরোজ খানের সাথে আলাপ কালে বলেন, তারা ৩ বারই চাল বিতরণ করেছে। ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর রয়েছে সেখানে। ট্যাগ অফিসার জানেন না তা বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবে তারা। এ নিয়ে বেশী বারাবারি করলে নেতাদের সহায়তায় প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকার চাদাবাজী মামলা করবে বলেও হুমকি প্রদান করে। ট্যাগ অফিসার রায়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ও চন্দ্রপুর ইউনিয়ন সমাজ সেবা কর্মী সামসুল আলম বলেন, ডিলারগণ কবে চাল উত্তোলন করেছে আর কবে বিতরণ করেছে তা আমরা জানি না। গত সপ্তাহে আমাকে ফোনে বলে ডাক বাংলোর সামনে আসেন আপনার স্বাক্ষর লাগবে। আমি আসলে বলে লাল কালিতে মার্ক করা স্থানে স্বাক্ষর করেন। আমি স্বাক্ষর করেছি। এর চাইতে বেশি কিছুই জানি না। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, সদর উপজেলা তার মূল দায়িত্ব। এছাড়া তিনি আরও ৫টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ডিলারগণ ৩ বার চাউল উত্তোলন করেছে আর তিনবার চাল বিতরণের মাস্টার রোল জমা দিয়েছে। চাল বিতরণ না করে মাস্টার রোল জমা দিল কেন তা খতিয়ে দেখবেন তিনি।