মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর

0
1176

গাজীপুর প্রতিনিধি, গড়াইনিউজ২৪:: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা ও নির্যাতনের দায়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সে সময়ের ত্রাস আলবদর নেতা মীর কাসেম আলীর প্রাণদণ্ড কার্যকর হলো ৪৫ বছর পর। রাত সাড়ে ১০টা ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করে, কাশিমপুর কারাগারের সূত্রগুলো বলছে, রাত ১০টার দিকে মীর কাসেমকে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট তার হাত থেকে সাদা রুমাল ফেলে দেয়ার পর জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে ধরে টান দেন। এরপর ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখার পর তার দেহ পরীক্ষা করেন সিভিল সার্জন হায়দার আলী খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে নির্যাতনকেন্দ্র খুলে মুক্তিকামীদের অত্যাচার ও কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে খুন করার অভিযোগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ৮ মার্চ সে আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গত মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলেও রাষ্ট্রপতি কাউকে ক্ষমা করতে পারেন। তবে মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন শুক্রবার। আর পরদিনই কার্যকর হয় তার দণ্ড। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মীর কাসেম আলীই ষষ্ঠ ব্যক্তি যার ফাঁসি কার্যকর হলো। এর আগের পাঁচ জনের মতো তারও মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের প্রমাণগুলো স্পষ্টই ছিল। তারপরও বিচার প্রক্রিয়ার পদে পদে তার সাজা হওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা বলা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ, সরকারের মন্ত্রী এমনকি সর্বোচ্চ আদালতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে। এই বিচার ঠেকাতে জামায়াত নেতা ২০০ কোটি টাকা লবিংয়ে খরচ করেছিলেন বলে আপিল বিভাগে প্রমাণ ‍তুলে ধরেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছে তাতে অসন্তোষ জানিয়েছেন খোদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরও মীর কাসেমের দণ্ড কার্যকর নিয়ে তৈরি হওয়া সন্দেহ-সংশয় যেন শেষই হচ্ছিল না। এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর রিভিউয়ের রায় প্রকাশের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল এই রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রকাশ্যেই। তবে শেষ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।
দণ্ড কার্যকরের আগে
সন্ধ্যা সাতটার দিকে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন কাশিমপুর কারাগারে ঢুকেন। রাত সোয়া নয়টার দিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসিক এস এম আলম, সিভিল সার্জন হায়দার আলী খান ও পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ যখন কারাগারে ঢুকার পর পরই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।  এর আগে দণ্ড কার্যকরের আগে মীর কাসেমকে তওবা পড়ান কারাগারের পেশ ইমাম হেলাল উদ্দিন। রাত সোয়া নয়টার দিকে কারাগারের ভেতরে ঢুকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। এর একটিতে করেই মীর কাসেম আলীর মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নেয়া হবে সেটা আগেই জানা ছিল।
সকাল থেকেই কাশিমপুর ঘিরে আগ্রহ
মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন না, কারা মহাপরিদর্শক এই বিষয়টি নিশ্চিত করার পর শনিবার তার ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে, এটা অনুমিতই ছিল। সকাল থেকেই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের আশেপাশে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। এক পর্যায়ে কারাগারে দর্শণার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর যতই সময় গড়াচ্ছিল ফাসি কার্যকরের বিষয়টি ততই স্পষ্ট হয়। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন নিষ্পত্তির পর সরকারের নির্বাহী আদেশে ফাঁসি কার্যকর হয়। বেলা দেড়টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ইকবাল হাসান এই চিঠি নিয়ে কাশিমপুর কারাগারে যান। এরপর শনিবার দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আর কোনো সন্দেহই ছিল না।
স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ
রেওয়াজ অনুযায়ী ফাঁসির আসামিকে স্বজনদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। সকালেই কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ মীর কাসেমের পরিবারকে বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে কারাফটকে থাকতে বলে। এরপর মীর কাসেমের মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘শেষবারের মতো আব্বুকে দেখতে যাচ্ছি।’ বিকাল সোয়া চারটার দিকে মীর কাসেমের স্বজনকা কাশিমপুর কারাগারে ঢুকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার কিছুক্ষণ পর তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আশেয়া খাতুন কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্বামী তাকে বলেছেন, তিনি মৃত্যুভয়ে ভীত নন।

বিক্ষোভের মধ্যেই গ্রামের বাড়িতে কবর দেয়ার প্রস্তুতি
দণ্ড কার্যকর হচ্ছে আজই, এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে মীর কাসেমের জন্য কবর খোড়া শুরু হয় রাত আটকার দিকে। একই সময় এই জামায়াত নেতার মরদেহ মানিকগঞ্জে না নিতে বিক্ষোভ হয় মানিকগঞ্জ শহর ও চালা গ্রামে। বিক্ষোভকারীরা বলছিলেন, একাত্তরের কুখ্যাত এই অপরাধীদের কবর দিয়ে মানিকগঞ্জকে অপবিত্র করতে চান না তারা। তবে পুলিশ এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদেরকে সরিয়ে দেয়। চালা গ্রামের যে এলাকায় কবর খোঁড়া হয়েছে, তার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।