সারাদিন আকাশ মেঘলা! বিরামহীন বর্ষণে কুষ্টিয়ার জনজীবন বিপর্যস্ত

0
2560

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া :: কয়েক ঘন্টার টানা বর্ষণে কুষ্টিয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেক বেলা পর্যন্ত বন্ধ থাকছে এবং যানবাহন চলাচল স্বল্পতা হওয়ার কারনে জন দুর্ভোগ বেড়েছে। গত শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে আজ রবিবার দিনভর কখনো একটানা ভারী এবং কখনো হলকা ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া। হঠাৎ বৃষ্টিতে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে কুষ্টিয়া শহরের বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলে। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুষ্টিয়া শহরের পশ্চিম মজমপুর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। পশ্চিম মজমপুর পুলিশ লাইনের সামনে বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সড়কে প্রায় ৫ হাজার মানুষ এবং হাজির গলিতে ৫ হাজারসহ ১০ হাজার মানুষ এখন পানি বন্দি। পশ্চিম মজপুরে এ দুটি সড়কে দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে থাকে। এতে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ আষাঢ়ের পুরো মৌসুমে থাকে পানির নিচে। বাড়ির উঠোনে পানি, রাস্তায় পানি, বাড়ির সিঁড়ি ঘরে পানি, টয়লেটে পানি এমনকি থাকার ঘরেও পানি। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে পশ্চিম মজমপুর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সড়কটি এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় হেরিং রোড থেকে পীচকরণ করার পর আর কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে প্রতি বছর এ সড়কে হাঁটু জল জমে থাকে। চলতি বছর এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়কের কোল ঘেঁষে কিছুটা মাটি ও রাবিশ ফেললেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে ওই সড়কে রিকশা, অটো, মোটরসাইকেল, সাইকেল কোনো বাহন নিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে এলাকায় বসবাসরত হাজি আব্দুল মজিদ খুব আক্ষেপ করে বলেছেন, পৌরসভার উদ্যোগে শুনছি বাড়াদি, বারখাদা, পূর্ব মজমপুর এলাকায় রাস্তা-ড্রেনের কাজ হচ্ছে কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না। এলাকায় অপর বসবাসকারী সাবেক সংসদ সদস্য দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার জানান, এই রাস্তাটি সংস্কারের ব্যাপারে পৌরসভায় এলাকার দুই শতাধিক মানুষ স্বাক্ষরিত একটি আবেদন জমা দেয়া হয়েছে গত কয়েক মাস আগে কিন্তু তাতে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু হয়নি। তিনি জানান, আমার জানা মতে পৌর পরিষদের মাসিক সভায় এ রাস্তাটির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন রাস্তাটি সাধারণ মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় বাজার, কোর্টপাড়া, থানাপাড়া, কালিশংকরপুর, পেয়ারাতলা, জেলখানা, ফায়ার সার্ভিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, হাসপাতাল রোড, পূর্ব মজমপুর, পশ্চিম মজমপুর, কাটাইখানা মোড়, ছয় রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নাকাল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে শহরবাসী। শহরের প্রধান সড়ক আরসি আরসি রোড ও এনএস রোডের বেশ কিছু স্থানে ও দুই পাশে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে সড়কের পাশের অনেক দোকান বন্ধ ছিল। শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। টানা বর্ষণে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় আটকা পড়ে রিকশা, ভ্যান, অটো বাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন। যে অল্প কিছু রিকশা, ভ্যান ও অটোবাইক চলাচল করছে তার ভাড়া গুনতে হয় কয়েকগুণ। ফলে সকালেই কাজে বেরিয়ে বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অপরদিকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় দ্রুত জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার বাদল শেখ জানান, পৌরসভার রোডগুলোতে ডাস্টবিনের ময়লা আর্বজনা জমে থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপর একটি সূত্র জানায়, শহরের ড্রেনের পানি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক পাশের ‘বোরো পীঠ’ হয়ে জিকে ক্যানেলের সাইফোন দিয়ে মান্নান খাল হয়ে কালী নদীতে পতিত হয়ে আসছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক জলাভূমি ‘বোরো পীঠ’ হস্তান্তরের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে বারবার জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আজও পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের বোরো পীঠের জায়গা পৌরসভার কাছে হস্তান্তরের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অচিরেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা শিকার হবে এই শহরবাসী। তাই এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হাতে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পৌরবাসী। এ ব্যাপারে কয়েকজন পৌরবাসী জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে কুষ্টিয়া-ঢাকা রোডের বোরো পীঠকে পৌরসভাকে হস্তান্তর করা না হলে কুষ্টিয়া শহর এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিতে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। টানা বর্ষণে কুষ্টিয়া শহরের বেশ কিছু জায়গায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে রিকশাচালক, দিনমজুর, অটোবাইকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকছে। বৃষ্টিতে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আবার অতি প্রয়োজনে বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে অনেকে দৈনন্দিন কাজকর্ম সারছেন।