ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আজ আঘাত হানবে

0
961

গড়াইনিউজ২৪.কম:: উৎপত্তির গতিমুখ দেখে ধারণা করা হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ভারতের উপকূলের দিকে যাবে। কিন্তু সেটি বারবার দিক পরিবর্তন করে সর্বশেষ বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বারবার দিক পরিবর্তন করা এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিও ক্ষণে ক্ষণে কমবেশি হচ্ছে। সর্বশেষ খবর মতে শক্তিশালী রূপ নিয়ে আজ দুপুরের পর খুলনা অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে অস্থির ঘূর্ণিঝড়টি। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার। তবে, ঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় গতিবেগ থাকতে পারে ১১০ কিলোমিটারের আশপাশে। শুক্রবার রাতে মংলা ও পায়রাসমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হয়েছে। রাজধানীর সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে নেও চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার পর। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ইতিমধ্যে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোয় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। অনেক মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করবে। ঝড়ের গতিবেগ নিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহানা সুলতানা। শুক্রবার রাতে ঝড়ের সর্বশেষ অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে ঢাকা টাইমসকে শাহানা বলেন, ‘ঝড়ের গতি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। বর্তমানে যে গতি রয়েছে তাতে বলা যায়, বাংলাদেশে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়ের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। শনিবার দিনের বেলায় ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলের খুলনা অঞ্চল দিয়ে আঘাত হানতে পারে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে চার নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

ঝড়ের প্রভাবে বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘৯ তারিখ বাংলাদেশ উপকূলের সুন্দরবন অংশে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্বল্প উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলেও বন্যার আশঙ্কা নেই।’ এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সাগর উত্তাল থাকায় তীরে ভিড়ছে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ ঘোষণা বলবৎ থাকবে। এছাড়া, উপকূলীয় জেলাগুলোতে বুলবুল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মেডিকেল টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী। বাতিল করা হয়েছে সরকারি ছুটি। শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় চাল, টিন ও নগদ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকার কারণে পটুয়াখালীতেও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার তীরে ভিড়ছে। শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশ-ভারত উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উত্তর-পশ্চিমদিকে এগিয়ে আসছে। এটি খুলনা, পটুয়াখালী ও বরিশালের আশপাশ এলাকায় শুক্রবার বিকাল নাগাদ আঘাত করতে পারে।

এদিকে আগে থেকে যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করছিলেন, এমন প্রায় এক হাজার ২০০ জন পর্যটক সেখানে আটকে পরেছেন। সমুদ্রে ৪নং সতর্কতা সংকেত থাকায় শুক্রবার সকালে টেকনাফ থেকে কোনও নৌযান সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। ফলে পর্যটকরা ফিরতে পারছেন না।  আটকে পরা পর্যটকরা কোনো ধরনের বিপদে নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। দূর্যোগপূর্ব অবস্থায় সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের থাকার জন্য বিশেষ ছাড়ের নির্দেশ রয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সাগর উত্তাল। জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ভ্রমণে আসা প্রায় ১২০০ পর্যটক দ্বীপে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে নিরাপদে আছেন। সাগর স্বাভাবিক হয়ে গেলে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে।’ সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ  বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের খাদ্যসহ কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। হোটেল মালিকদের বলে দেয়া হয়েছে, যতদিন আবহাওয়া ভালো হবে না ততদিন পর্যটকদের কাছ থেকে হোটেল ভাড়া অর্ধেক নেওয়ার জন্য।’ টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টেকনাফ থেকে কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ, জলযান, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার ফলে সর্তকতার জন্য সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজসহ জলযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দ্বীপে হাজারের অধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন, তাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো হলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’