নৌকায় ভোট দিন, আরো উন্নয়ন করব, রংপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

0
1929

গড়াইনিউজ২৪.কম:: নির্বাচনী সফরের দ্বিতীয় দিনে রংপুরের তারাগঞ্জের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে এলাকার আরো উন্নয়ন হবে। রংপুরের দুর্ভিক্ষাবস্থা মঙ্গা দূর করার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এও বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়াতেই এই সুফল পেয়েছে রংপুরবাসী। রবিবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এই সমাবেশ হয়। বেলা সাড়ে ১২টায় তিনি সেখানে পৌঁছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ঢাকা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর যান আকাশপথেই। আর সেখান থেকে সড়ক পথে যান  সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখান থেকে সড়ক পথে যান রংপুর।  সকাল থেকেই জনসভাস্থলে দলে দলে আসতে থাকে মানুষ। এক পর্যায়ে জনসভাস্থল উপচে জনতার ভিড় আশেপাশের এলাকায় গিয়ে ঠেকে। মানুষজন হেঁটে, ভ্যানে, রিকশায়, ট্রাকে, মোটরসাইকেলসহ যে যার মতো করে জনসভায় আসে। রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি বলেন, ‘এত লোক সমাগম হওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকার জন্য যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন তা স্বাধীনতার এত বছরেও কেউ করেনি। তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই এত মানুষ।’ কথা হয় ইকলচালি বাজারের পথচারী আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি ট্রাকে চড়ে জনসভায় আসছিলেন। গড়াইনিউজকে বলেন, ‘শেখের বেটি তো হামার এলাকার বউ, হামার বাড়িত আসবে হামরা তাক দেকপের যাই। তার কতা শুনবের যাই। দেখি কী কয় শেখের বেটি?’ কথা হলো গজেন্দ্রনাথ বর্মণের সঙ্গেও। বলেন, ‘এর আগে সরাসরি কখনো শেখ হাসিনাকে দেখিনি। তাই তাকে দেখতে আসছি। তিনি আমাদের তারাগঞ্জ কলেজকে সরকারি করেছেন। এই এলাকার বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ দিয়েছেন। তাই তাকে দেখার খুব ইচ্ছে। সে কারণে আমরা এখানে এসেছি।’

রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভাকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে তারাগঞ্জ, রংপুর, মিঠাপুকুর শঠিবাড়ি পীরগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক ডিউক চৌধুরী পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ‘ডিউককে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। আমরা যেন আপনাদের জন্য কাজ করতে পারে সে দোয়া করবেন।’ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের মতোই এবারো জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও রংপুর-২ আসন নিয়ে দুই জোটের সমঝোতা হয়নি। সেখানে জাতীয় পার্টি প্রার্থী করেছে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুকে। আসনটি উন্মুক্ত রেখেছে দুই দল।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে মানুষের উন্নয়ন হয়। এই অঞ্চল ছিল মঙ্গা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আর মঙ্গা হয় নাই। কেউ না খেয়ে নাই।’ ‘পুরো রংপুর ছিলো দুর্ভিক্ষ এলাকা। আমি বদরগঞ্জ এসেছিলাম। তখন দেখেছি দুর্ভিক্ষ। এখন সেই দুর্ভিক্ষ নেই। আপনারা নৌকায় বারবার ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়ন হয়েছে।’ আবার ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে, তারও বর্ণনা দেন। বলেন, ‘প্রতি উপজেলায় আধুনিক মসজিদ হবে, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে। আমার লক্ষ্য আপনারা ভালো থাকবেন, দুই বেলা ভাত খাবেন।’  দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকার কী কী করেছে, তারও বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তারা যাতে, করে খেতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে দুই লক্ষ টাকা দুই শতাংশ সুদে লোন নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’ ‘কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়েছি। সার বীজসহ প্রত্যেকটা জিনিস যাতে তারা সহজে পান সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবে না। কোনোদিন যেন মঙ্গা না হয় সেজন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প করেছি। দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।’ ‘আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। সৈয়দপুর বিমানবন্দর করেছি। ইপিজেডে করেছি।’ তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ বি এম মোজাম্মেল হক, আমজাদ হোসেন, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুও এ সময় বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেহপুরে প্রয়াত স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার বাড়িতে যান। দুপুরের পর পীরগঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি।