২৫০ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ: নিজেকে লুকাচ্ছেন দিলদার

0
2207

গড়াইনিউজ২৪.কম:: আড়াইশ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণের বিষয়ে প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম দাবি করেছিলেন তার সব অলংকারের কাগজপত্র আছে, আর এগুলো সময়মতো জমাও দেবেন। কিন্তু সেই কাগজপত্র জমা দেয়ার দুটি তারিখ চলে গেল, শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে এলেন না দিলদার। তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি তিনি। স্বর্ণসহ সিলগালা করা পাঁচ বিক্রয়কেন্দ্রে শুল্ক গোয়েন্দাদের দ্বিতীয় দফা অভিযানেও হাজির হননি তিনি। তার প্রতিনিধি এলেও সব স্বর্ণের বৈধতার কাগজ দিতে পারেননি তারা। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দিলদার নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। স্বর্ণের কাগজপত্র থাকার দাবি করেও তার এমন আচরণ কেন, তার কোনো ব্যাখ্যাও নেই অধিদপ্তরের কাছে। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক সফিউর রহমান  বলেন, ‘প্রথম দিনের তলবে আপন জুয়েলার্সের মালিক আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা তলবে তিনি আসেননি। পরে আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাদের সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু আজকেও দিলদার সাহেব আসেননি। পরে আমরা তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালালে তাদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হন। গ্রাহকদের স্বর্ণের কিছু কাগজপত্রও তারা দিয়েছে।’  এখন পর্যন্ত যেসব স্বর্ণের কাজগপত্র পাওয়া যায়নি সেসব স্বর্ণের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে- জানতে চাইলে এই শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সেই ব্যবস্থা কী- জানতে চাইলে সফিউর রহমান বলেন, ‘সেটা এখন অগ্রিম কিছু বলতে চাচ্ছি না।’ শুল্ক গোয়েন্দাদের তলবে যেদিন দিলদারের হাজির হওয়ার কথা, একই দিন জুয়েলারি সমিতির সংবাদ সম্মেলন ছিল রাজধানীতে। এই সমিতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আপন জুয়েলার্সও। এই সংবাদ সম্মেলনেও আপনের মালিকের উপস্থিতি ছিল না, ছিল না তার কোনো প্রতিনিধিও। সংবাদ সম্মেলনে আপনের অনুপস্থিতি নিয়েও কথা হয়। জুয়েলারি সমিতি জানায়, আপন জুয়েলার্স কোনো অপকর্ম করলে তার দায়-দায়িত্ব তারা নেবে না। আপনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হলে বাজুসও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। গত ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দারা আপন জুয়েলার্সের গুলশানের দুটি শাখায় এবং উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালংকার ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করেন। এসব মজুদের বৈধ দলিলাদি দেখাতে না পারায় এবং আমদানি ও ক্রয়ের উৎস সন্দেহজনক হওয়ায় ওগুলো নিজেদের অধীনে রেখে বিক্রয়কেন্দ্রগুলা সিলগালা করা হয়। এসব অলঙ্কারের মূল্য আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি। জব্দ করার দিন আপন দাবি করেছিল, এসব স্বর্ণের মধ্যে ১০ কিলোগ্রামের বেশি স্বর্ণ গ্রাহকের। তবে এর পক্ষেও কোনো কাগজপত্র দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত ১৭ মে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই গোলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। জব্দকৃত সোনার অনুকূলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিলাদি জিজ্ঞাসাবাদের সময় দেখাতে পারেনি আপন ‍জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। এরপর এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ২৩ মে আবার হাজিরার নির্দেশনা দেয়া হয় আপনের মালিককে। কিন্তু সেদিন দিলদার আসেননি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে। তারপরও আপনকে দুই দিন সময় বাড়িয়ে ২৫ মে সব নথিপত্র নিয়ে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল খান বলেন, ‘আমরা আরও দুইদিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছি, যাতে আদালতে বলতে না পারে যে, সময় ও সুযোগ পায় নাই।’