চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬

0
1163

চট্রগ্রাম অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দু’টি জঙ্গি আস্তানায় ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শিশু ও নারীসহ ৫  জন নিহত হয়েছেন। শিশু ছাড়া বাকি ৪ জন নব্য জেএমবির সদস্য। পুলিশ জানায়, নিহতদের মধ্যে দু’জন ছিলেন নব্য জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর জঙ্গিদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে আশেপাশের কয়েকশ’ গজ দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। বাকি দুই জঙ্গি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে গুলিবিনিময়কালে প্রাণ হারান। ছয় বছর বয়সের শিশুটির লাশ সিঁড়ির উপর পড়েছিল। গতকাল সন্ধ্যায় শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।পুলিশ নিহত জঙ্গিদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেনি। ঘটনার সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণে সোয়াত বাহিনীর দুই জন, পুলিশের একজন এবং ফায়ার সার্ভিসের একজনসহ চারজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানা গেছে। অভিযানের শেষ পর্যায়ে ওই বাড়ির বিভিন্ন ফ্ল্যাটের ২০ বাসিন্দাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তারা অক্ষত রয়েছেন বলে পুলিশ জানায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬ নামের ওই অভিযান শেষের ঘোষণা দেন। ১৯ ঘণ্টার এই অভিযানে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াত, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম, সিআইডির ক্রাইম সিন ও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি টিমের সদস্যরা অংশ নেন। বিস্ফোরক দিয়ে ৫০ কেজি
অভিযান শেষ হওয়ার পর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধারের কাজ। বিকাল ৩টায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি কাজী ছানোয়ার আহমেদ ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা সাংবাদিকদের জানান। এর মধ্যে একটি কার্টনে এসিড, লিকুইড কেমিক্যাল ও ১২ সেট জেল এক্সক্লুসিভ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এখানে যেসব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে সেগুলো দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি বোমা বানানো যেত। যে বিস্ফোরক দিয়ে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হয়েছে তা যদি কোনো জনবহুল এলাকায় হতো তাহলে আশেপাশের ৫০ গজের মধ্যে অবস্থানকারী সব লোকই মারা যেতো। ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল ভবনের সাধারণ বাসিন্দাদের অক্ষত অবস্থায় বের করে আনা। বুধবার রাতে কয়েকবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আমাদের অপারেশন শুরু হয়। আমাদের সোয়াত সদস্যরা যখন পাশের ভবন থেকে মূল ভবনটিতে যায় তখন দুই জঙ্গি আল্লাহু আকবর বলে ছাদে উঠে আসে। এক জঙ্গি তার কোমরের সাথে বেঁধে রাখা বোমা টিপে বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। তা দেখে সোয়াত সদস্যরা গুলি করলে এক জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরিত হলে অপর জঙ্গিও মারা যায়। এরপর আমরা ভেতর থেকে লোকজনকে বের করে নিয়ে আসার কাজ শুরু করি।’ তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতায় ভবনের বিভিন্ন দিকের জানালা খুলে ফেলে সেখান থেকে নারী ও শিশুসহ ২০ জনকে বের করে আনা হয়েছে। ভবনের সামনের দিকে যে বোমাটি ছিল সেটিও বিস্ফোরণ করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে দু’টি কক্ষে প্রচুর বিস্ফোরক ও বোমা রয়েছে। ছাদেও একটি বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে গেছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ভবন নিরাপদ করার জন্য পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম ভেতরে প্রবেশ করছে। আমরা চারটি মৃতদেহ সেখানে দেখেছি। দুটি লাশ একেবারেই ছিন্নভিন্ন হয়ে রয়েছে। দুটি লাশ মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় দুই সোয়াত সদস্য, এক পুলিশ ও এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হয়েছেন।