কাশ্মির ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার ধাক্কা বলিউডে

0
2291
বলিউডে পাকিস্তানি তারকা মাহিরা খান

গড়াইনিউজ২৪.কম:: কাশ্মির ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই উত্তেজনার ধাক্কা লেগেছে বলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও। ভারতে থাকা পাকিস্তানি শিল্পীদের আদৌ সুযোগ পাওয়া উচিত কি না  তা নিয়ে আবার তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী দল ফাওয়াদ খান বা মাহিরা খানের মতো সব পাকিস্তানি তারকাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেয়ার পর করন জোহরের মতো কোনো কোনো ফিল্ম নির্মাতা পাকিস্তানি শিল্পীদের হয়ে মুখ খুলেছেন। তবে তা সত্ত্বেও এই বিতর্ক সহজে থামছে না এবং যেসব ছবিতে পাকিস্তানি অভিনেতারা রয়েছেন সেগুলোর মুক্তি নিয়েও এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
অতীতে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পিচ খুঁড়ে পাকিস্তানের ম্যাচ পণ্ড করা কিংবা স্রেফ হুমকি দিয়ে গুলাম আলির কনসার্ট বাতিল করার ইতিহাস আছে মহারাষ্ট্রের উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার। এবারে সেই শিবসেনা ভেঙে তৈরি হওয়া দল, রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ঘোষণা করেছে উরির হামলায় আঠারো জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর তারা সব পাকিস্তানি শিল্পীকে ভারত-ছাড়া করে ছাড়বে। ওই দলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়টি যিনি দেখেন, সেই আমেয় খোপকার বলছেন “যাদের পরিবারের লোক ওই জঙ্গি হামলায় মারা গেছে তাদের অবস্থাটা একবার ভাবুন। এই শোকের আবহে আমাদের কি পাকিস্তানি শিল্পীদের রেড কার্পেট বিছিয়ে অভ্যর্থনা করাটা সাজে? আর তা ছাড়া ভারতের শিল্পীরা কি কখনো পাকিস্তানে গিয়ে এই রকম সম্মান পান?” এ বছর রোজার পরের ঈদে বলিউডের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার ছিল সালমান খানের ‘সুলতান’ – আর সেই ছবির বড় আকর্ষণ ছিল রাহাত ফতেহ আলি খানের গলায় ‘জগ ঘুমেয়া’। ‘খুবসুরত’ বা ‘কাপুর অ্যান্ড সন্স’-এর মতো ছবির সুবাদে পাকিস্তানের ফাওয়াদ খানও বলিউডে ভীষণ পরিচিত মুখ – খুব শিগগিরি মুক্তি পাওয়ার কথা তার নতুন ছবি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’। শাহরুখ খানের আসন্ন ছবি রইসেও অভিনয় করেছেন পাকিস্তানের নায়িকা মাহিরা খান। রাজ ঠাকুরের হুমকি মানতে গেলে আজ রাতের মধ্যেই বলিউড থেকে তল্পিতল্পা গোটাতে হবে এদের সবার। এদিকে এই হুমকির পর ভারতে পাকিস্তানি শিল্পীদের হয়ে প্রথম মুখ খুলেছেন চিত্রনির্মাতা করন জোহর – যিনি আবার অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল ছবিটির প্রযোজকও বটে। করন জোহরের যুক্তি, ‘কয়েকজন প্রতিভাকে বা শিল্পীকে নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাসবাদ কখনওই বন্ধ করা যাবে না – এর জন্য অনেক বড় শক্তিকে মাথা ঘামাতে হবে। শিল্পীদের নিষিদ্ধ করাটা কখনও এর সমাধান হতে পারে না।’ অনেকটা একই সুরে এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছেন বলিউড অভিনেতা রীতেশ দেশমুখও। রীতেশও বলছেন, সব সময় দেখা যায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিল্পীদেরই প্রথম আক্রান্ত হতে হয় – কারণ তারা হলেন ‘সফট টার্গেট’। কিন্তু এর পরও বলিউডে পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর থেকে বিপদের খাঁড়া সরছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। মাহিরা খান কিছুদিন আগেই ভারতে দেওয়া তার প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার মতো শিল্পীরা হলেন ‘পাকিস্তানি সংস্কৃতির দূত’। এমনও মন্তব্য করেছিলেন, “যে দেশ শিল্পীর সম্মান করে, সবচেয়ে বেশি উন্নতি করে তারাই।” কিন্তু ভারত ছাড়ার হুমকি পাওয়ার পর পাকিস্তানি শিল্পীরা কেউই এখনও মুখ খোলেননি। যে ফাওয়াদ খান প্যারিসে জঙ্গি হামলার পর কঠোর নিন্দা করে টুইট করেছিলেন, তিনি উরির ঘটনার পর নীরব কেন সেই প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যে ভারতের কাগজে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। বলিউডের কেউ কেউ এমনও দাবি তুলেছেন, ভারত সরকারই এই পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করুক। সোজা কথায়, বলিউডে পাকিস্তানিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।