চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে রশিদ এগ্রো ফুডের তুলনা নেই!

0
1911
করােনাকে পূঁজি করে জালিয়াতির মাধ্যমে চালের দাম বৃদ্ধিতে রশিদ এ্যাগ্রো ফুডকে হুঁশিয়ারী। ছবি: গড়াইনিউজ২৪.কম

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: করোনা ভাইরাসের অজুহাতে কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে চালের দাম বাড়ানাের অভিযােগ করােনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরু থেকেই। বিশেষ করে চিকন চালের জন্য প্রসিদ্ধ এই খাজানগরের মােকামে ৩ থেকে ৪ দফায় বাড়ানাে হয় চালের দাম। প্রকার ভেদে এসব চালের দাম বাড়ানাে হয় কেজি প্রতি প্রায় ১০টাকার ওপরে। ৩৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয় ৫০ টাকা। জেলা বাজার মনিটরিং টিমের ধারাবাহিক তদারকির কারনেই ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে করােনাকে পুজি করে ৫০টাকায় বিক্রি না করে দু’টাকা বাড়িয়ে ৫২টাকায় বিক্রি শুরু করে। চালের দাম কেন বাড়ানাে হচ্ছে এমন বিষয়টি সরাসরি তদারকি শুরু করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩(সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। করােনাকে পূজি করে কোন ব্যবসায়ী যাতে করে ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেনকে কঠোর নির্দেশনা দেন। একই সাথে মাহবুবউল আলম হানিফ চালকল ব্যবসায়িদের ফোন করে চালের দাম না বাড়ানাের অনুরােধ জানান। যারা চালের দাম বৃদ্ধি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারীও দেন তিনি। মাহবুবউল আলম হানিফের নির্দেশে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেনের নেতৃত্বাধীন বাজার মনিটরিং টিম অভিযান চালায় খাজানগরের সকল মিলে। কিন্তু প্রায় সব মিল মালিক বাজার মনিটরিং টিমের নির্দেশনা মেনে ৫০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করলেও দেশের শীর্ষ চালব্যবসায়ী রশিদ এ্যাগ্রো ফুডের মালিক আব্দুর রশিদ সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কেজিপ্রতি দু’টাকা বাড়িয়ে চাল বিক্রি অব্যাহত রাখেন। কথিত রয়েছে, এই সুযােগে ১৮-২০দিনের ব্যবধানে কয়েক কোটি টাকার মুনাফা লুটেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বাজার মনিটরিং টিম পুনরায় রশিদকে সতর্ক করলেও ভােল পাল্টে এবার জালিয়াতির আশ্রয় নেন তিনি। ডুপ্লিকেট চালান করে আবারও ৫২ টাকা কেজি দরে ঢাকাসহ দেশের বাজারে সরবরাহ করেন ধুর্ত এই চালব্যবসায়ী। তাঁর এই চালাকী যাতে করে কেউ ধরতে না পারে সেজন্য তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেন। এজন্য তিনি ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী বাজারে তার প্রতিষ্ঠানের যেসব চাল সরবরাহ হয় সেখানেও বর্ধিত দরেই চাল বিক্রি করেন। আর এই জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেনের। শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেন রশিদ এ্যাগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী রশিদসহ জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন। এসময় কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা অটো মেজর এন্ড হাস্কিং মিলের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স এসােসিয়েশন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি হাজী ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, সমিতির উপদেষ্টা এমএ খালেক। এসময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেন রশিদ এ্যাগ্রো’র স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুর রশিদের কাছে কেন চালের দাম বাড়ানাে হয়েছে তা জানতে চান। রশিদ চালের দাম নতুন করে অর্থাৎ ৫০টাকা কেজির ওপরে বাড়ানাে হয়নি দাবী করলে উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখান রশিদের কাছে। আর এই অভিযােগে তাকে ভৎসনাও করেন জেলা প্রশাসক। এক পর্যায়ে ৫২টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেছেন তা স্বীকার করে খাদ্য বিভাগের ডিজি’র অনুমতি নিয়েই বিক্রি করেছেন দাবী করেন রশিদ। সত্যতা যাচাই করতে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনাৎ খাদ্য বিভাগের ডিজিকে ফোন দেন। এসময় ডিজি রশিদকে ৫২টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করার অনুমতি দেননি বলেও জানান। রশিদের এমন ছলচাতুরিতে ক্ষিপ্ত হন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মাে. আসলাম হােসেন। তিনি জানান মানুষকে বেকায়দায় ফেলে মুনাফা লুটার কোন অধিকার আপনার নেই। আপনি এই দু:সময়কে পুজি করে মুনাফা লুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসময় উপস্থিত কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন এর আগেও আপনাকে কয়েক দফা সতর্ক করা হয়। আপনি এমন অসদুপায় অবলম্বন থেকে বিরত থাকুন। নাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন যারা চালের বাজার অস্থির করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বার বার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং টিমের সাথে কথা বলেছেন, চালকল মালিক সমিতির নেতাদেরকেও চালের দাম না বাড়ানাের অনুরােধ করেছেন। কিন্তু সেই অনুরােধ অমান্য করে আপনাদের মত যারা চালের বাজার অস্থির করছেন তারা ঠিক করছেননা। বিষয়টি দু:খজনক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭.৩৪ ঘন্টা, ১৫ এপ্রিল ২০২০।