ফেলানী হত্যার ৮ বছর

0
2196
কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে ফেলানী। ছবিঃ সংগৃহীত।

গড়াইনিউজ২৪.কম:: কেটে গেল ফেলানী হত্যার ৮ বছর। আজও কাঙ্খিত বিচার পায়নি পরিবার। ২০১১ সালের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক পিলার ৩নং সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। সে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের নুরল ইসলাম ও জাহানারা বেগম দম্পত্তির প্রথম সন্তান।

এবারেও ৭ জানুয়ারি সোমবার পারিবারিকভাবে পালন করা হয় তার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এ সময় মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ফেলানীর বাবা-মা। ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম জানান, ‘মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি, বিচার পেলাম না। কেটে গেল ৮বছর। সরকারের কাছে আবেদন এ বিচারটা যেন হয়।’

এদিকে নাগরিক পরিষদের আয়োজনে এবারেও ৭ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় আয়োজন করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সামাজ কর্মীদের নিয়ে মুক্ত আলোচনার। আহ্বায়ক শামসুদ্দীন জানান, ‘গত কয়েক বছর থেকে তারা এদিনে এ কর্মসূচী পালন করে আসছেন। তাদের দাবি ৭ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী ফেলানী দিবস পালন, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপুরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ, ঢাকার গুলশান-১ গোলচত্ত্বর থেকে তেজগাঁও রাস্তার নাম ফেলানী সরণী, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও সার্বভৌমত্ব লংঘন বন্ধের।’ তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য ২০১৫ সালে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। পরবর্তীতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’ উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়। ২০১৫ সালের ২ জুলাই সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের সমতূল্য বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট আগের রায় বহাল রাখে। ৬ আগস্ট সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায় ভারতের নয়া দিল্লিতে সীমান্ত সম্মেলনে ফেলানী ইস্যুতে বিএসএফ মহাপরিচালক ডিকে পাঠক বলেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় তিনি অনুমোদন করেননি। যদি ফেলানীর পরিবার এ রায়ে সংক্ষুব্ধ হয় এবং বিএসএফকে অবহিত করে তাহলে বিএসএফ নতুনভাবে আদালত গঠন করে নতুন বিচারকদের সমন্বয়ে বিচার করবে। এছাড়া ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ১ম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রনালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) এর সচিব এবং বিএসএফ এর মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারী মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপুরণ চেয়ে আরও একটি আবেদন করে। পরে আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপুরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে ৫ লক্ষ রূপী প্রদানের অনুরোধ করেন। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুর ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপরে ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী শুনানী দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি এখনো। ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জর্জ কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বাড়াতে বিচারটি দুদেশের জন্য গুরুত্বপুর্ণ। আশা করা যাচ্ছে যুগান্তকারী রায় দেবে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট। তবে দ্রুত বিচার হওয়া প্রয়োজন।’