দিনাজপুরে ভিমরুলের কামড়ে ৩ বোনের মৃত্যু!

0
1866

গড়াইনিউজ২৪: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আরাজী লস্করা গ্রামে ভিমরুলের কামড়ে তিন বোনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। বাড়ির পাশের একটি বাঁশঝাড়ের নিচে বাঁশেরই তৈরি মাচায় বসে আপনমনে খেলছিল ওই তিন বোন। বড়টির নাম হাদিসা, বয়স ছয় বছর। মেজো ফারজানার বয়স চার। আর সবচাইতে ছোট মিমের বয়স এগারো মাস। হঠাৎ দমকা বাতাসে বাঁশে বাঁশে ঠোকাঠুকি লেগে ভেঙে যায় বাঁশঝাড়ের ডগায় থাকা ভিমরুলের চাকটি।
এরপর হাজার হাজার ভিমরুল এসে ছেঁকে ধরে শিশু তিনটিকে।
তাদের আর্ত চিৎকারে ছুটে যান তাদের মা তানজিনা বেগম এবং তাকেও ছেঁকে ধরে ভিমরুলের দল।
পড়ে অন্যান্য প্রতিবেশীরা এসে তাদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং সেখানেই তিন বোনের মৃত্যু হয়।
মারাত্মক আহত অবস্থায় মৃত্যুর মুখে তানজিনা বেগম।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আরাজি লস্কর গ্রামে।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক রমজান আলী বিবিসি বাংলাকে ঘটনার বিবরণ দেন।
আলীর প্রতিবেশী এবং দিনমজুর ইসলাম মিয়ার সন্তান শিশু তিনটি।
তার এই তিনটিই মেয়ে।
শনিবার শিশু তিনটিকে যখন ভিমরুল ছেঁকে ধরেছিল তখন চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান আরেক প্রতিবেশী রোজিনা আক্তার রিয়া।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “আমি ভাত খাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি চিৎকার। ভাবলাম গিয়ে দেখি কি হয়েছে। যাওয়ার সময় উঠান থেকে একটি ঝাড়ু তুলে নিলাম। আমার ঘর থেকে কয়েক কদম দূরেই ছিল বাঁশঝাড়টি। সেখানে গিয়ে দেখিমেয়েগুলোর গায়ে লেগে আছে হাজার হাজার ভিমরুল। তারা চিৎকার করছে আর গড়াগড়ি দিচ্ছে।
“আমি ঝাড়ু দিয়ে কিছু ভিমরুল তাড়িয়ে দেই। এসময় আমাকেও কয়েকটি ভিমরুল হুল ফোটায়। পরে আশপাশ থেকে আরো মহিলারা এসে পৌঁছালে তাদেরকে উদ্ধার করি”, বলছিলেন মিজ রিয়া।
রমজান আলী বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালটি তাদের গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছে। আহত মা ও মেয়েদের সেখানে পাঠানো হলে ডাক্তারেরা বড় দুই মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।
তখনও জীবিত ছিল মিম। তাকে ও তার মাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে নেয়ার পর মিমের মৃত্যু হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তানজিনা বেগম।
ভিমরুলের দংশনে মানুষের মৃত্যুর খবর খুব একটা শোনা যায় না।
ঢাকায় সরকারের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বিবিসিকে বলছেন, ঠিক কতগুলো ভিমরুল একটি মানুষকে হুল ফোটালে তার মৃত্যু হবে সেকথা স্পষ্ট করে বলা যাবে না।
“তবে মানুষটি যদি হয় ছোট আর ভিমরুলের সংখ্যা যদি হয় অনেক তাহলে তার মৃত্যু হতে পারে”।
ডা. রহমান বলছেন, ভিমরুল হুল ফুটানোর ফলে মানবদেহে ‘এনাফেলাকটিক শক’ তৈরি হয় যার ফলে ‘অ্যালার্জিক’ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় মানুষের মৃত্যু হয়।

সূত্র : বিবিসি