৫৮ দল নিয়ে এরশাদের নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ

0
1145

গড়াইনিউজ২৪.কম:: দেশে গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোটের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এসময় এরশাদ এই জোটের নীতিমালাও ঘোষণা করেন। রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন জাপা চেয়ারম্যান। জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলোর মধ্যে আছে এম এ মান্নানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুকের নেতৃত্বাধীন ধর্মভিত্তিক ৩৫ দলের জোট জাতীয় ইসলামী মহাজোট এবং সেকেন্দার আলী মনির নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় জোট বিএনএর নেতৃত্বে ২১ দল। গত কয়েক মাস ধরেই এরশাদ তার নতুন জোট গঠন নিয়ে নানা ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ‘পর্বতের মুষিক প্রসবের’ মতো কাণ্ড করলেন তিনি। মোট ৫৮টি দল থাকলেও এগুলোর একটিরও সারাদেশে কার্যক্রম নেই। তারা যেমন অপরিচিত, তেমনি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার মতো যোগ্যতাও নেই। এই দলগুলো এর আগে কখনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি অথবা অংশ নিলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট পায়নি। তবে এই দলগুলো নিয়েই দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান এরশাদ। পাশাপাশি নির্বাচনে ভালোও করতে চান। দেশ ও জাতির স্বার্থে এই জোট গঠনের দাবি করে এরশাদ নীতিমালায় বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে জোটগতভাব জাতীয় নির্বাচনসহ সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। জোটগথভাবে সরকার গঠন করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সমাজে ন্যায় বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের ধারা প্রবর্তন করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সম্মিলিত জাতীয় জোটের মৌলিক আদর্শ ইসলামি মূল্যবোধ তথা সব ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন, স্বাধীনতার চেতনা এবং বাংলাদেশি জাতীয়বাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনবোধ নিশ্চিত করার উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, এই জোট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক মুক্তি, ইসলামি মূল্যবোধ তথা অন্যান্য বিশ্বাসীদের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলাই হবে এই জোটের লক্ষ্য। আমারা নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলব। এরশাদ বলেন, এই জোটের সব দল ও শরিক জোট সমান মর্যাদা নিয়ে অবস্থান করবে। শরিক দল বা শরিক জোটের চেয়ারম্যানরা জোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে সম্মানিত হবেন। জোটের চেয়ারম্যান সব শীর্ষনেতার পরামর্শ গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। শরিক জোটের সদস্যদের প্রধানরা স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য থাকবেন। সম্মিলিত জোটের চেয়ারম্যান সভা ডেকে জোটের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো স্টিয়ারিং কমিটিকে অবহিত করবেন এবং এই জোটের একটি লিয়াজোঁ কমিটি থাকবে। জোটের চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, জোটের শরিক দল ও শরিক জোটের মহাসচিবরা নিজ নিজ দল বা জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমি হাওলাদার সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এরশাদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনে জোটের যৌথ ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে। শরিক দলের নিজস্ব ইশতেহারও থাকতে পারে। তবে তা সম্মিলিত জোটের ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। এরশাদ বলেন, এই জোটের অন্তর্ভুক্ত সব রাজনৈতিক দল তাদের নিজ দলের মত ও আদর্শ নিয়ে তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে। তবে জোটগথভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা পালন করতে সবাই বাধ্য থাকবে। জোটের অন্তর্ভুক্ত দলের ক্ষেত্রে যেকোনো নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি উন্মুক্ত থাকবে। নীতিমালায় এরশাদ বলেন, সম্মিলিত জাতীয় জোট নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেবে। ফল যাই হোক না কেন জোট বহাল থাকবে। জোটের দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য রাজনৈতিক বিপদে আপদে, সুদিনে-দুর্দিনে শরিকরা একে অপরের পাশে থাকবে। আমাদের অঙ্গীকার থাকবে নীতিমালা লঙ্ঘন ব্যতীত কোনোভাবে স্বার্থের বশবর্তী হয়ে কেউ জোট ছেড়ে যাবে না।