পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু তোলার ধুম!

0
54
ফাইল ছবি।

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: বারবার অভিযান চালিয়েও পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু তোলা বন্ধ করা যায়নি। হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এলাকার ১১টি পয়েন্ট থেকে এখনো প্রকাশ্যেই অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই শতাধিক বড় নৌকায় বালু নিয়ে যাওয়াও হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় নদীর স্বাভাবিক প্রকৃতি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি তীব্র ভাঙন দেখা দিচ্ছে পাড়ে। চলতি বছরের শুরুর দিকে নদীর গতিপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থেকে ঈশ্বরদী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত বালু তোলায় নিষেধাজ্ঞা দেন হাই কোর্ট। তার পরও প্রকাশ্যেই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রতিদিন কোটি টাকার বালু তুলছে এসব এলাকা থেকে। ১১টি পয়েন্টে নদীতে বসানো হয়েছে অসংখ্য ড্রেজার ও চোষক মেশিন। বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজশাহীর প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এরা কখনো উচ্চ আদালতের অনুমতির কাগজ দেখিয়ে, কখনো আবার নৌপুলিশকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করে আসছে। উত্তাল পদ্মা নদীতে সহজে প্রশাসন অভিযান চালাতে পারে না- এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা বালু তুলেই যাচ্ছে। যেদিন প্রশাসন অভিযান চালায় সেদিন নৌকা ভিড়িয়ে রেখে পাবনা প্রান্তে উঠে ফসলের খেত ও কলাবাগানে লুকিয়ে পড়ে। আভিযানিক দল চলে গেলে আবার লেগে পড়ে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে। এ কারণে কুষ্টিয়া প্রশাসন বারবার অভিযান চালিয়েও বালু উত্তোলনকারীদের ধরতে পারছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, নদীতে ডেজার ও চোষক মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। বালুভর্তি নৌকার কর্মী রেজাউল বলেন, বালু তোলা অন্যায় কি-না জানি না। নৌকার মালিক রূপপুরের মনসুর যেমনটি বলে আমাদের তেমনি করতে হয়। একই নৌকার মিন্টু মিয়া বলেন, মহাজনের কাজ করে খাই, যেমন বলে তেমনটি করি। পাকশী সেতু ও রেলব্রিজ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকা থেকেও তোলা হচ্ছে বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এসব স্থাপনা। একপ্রান্তে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় শত শত বিঘা কৃষি জমি চলে গেছে নদীতে। অন্য প্রান্তে পাবনার মধ্যেও গাছ ও বিভিন্ন ফসলসহ জমি ভেঙে যাচ্ছে নদীতে। এসব ব্যাপারে কুষ্টিয়ার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান মণ্ডল বলেন, আমি যুগিয়া-তালবাড়িয়া ধুলট মহল ইজারা নিয়েছি। আমার কোনো নৌকা কুষ্টিয়া জেলার মধ্য থেকে বালু তোলে না। আমি পাবনা থেকে বালু নিয়ে আসি। এদিকে হাই কোর্টের নির্দেশে বালু তোলা বন্ধে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এপ্রিল মাসে উপজেলায় উপজেলায় মনিটরিং টিম গঠন করেছেন। এসব কমিটিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ওসি ও নৌপুলিশের পরিদর্শককে সদস্য করা হয়। এসব কমিটি নিয়ম করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রভাবশালী কোনো বালু উত্তোলনকারীকে আটক বা জরিমানা করা যায়নি। বন্ধ করা যায়নি বালু উত্তোলন। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান জানান, বালু তোলা নিয়ে তাদের কোনো দায় নেই। এ বিষয়ে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন অভিযান চালিয়ে কাউকে ধরতে পারেননি। কুষ্টিয়ার ডিসি মো. এহেতেশাম রেজা বলেন, আদালত বালু তোলা বন্ধ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা সেই ভাবে কাজ করছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে গোয়ালন্দ থেকে পাকশী পর্যন্ত কোনো বালুমহাল ইজারা দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, ভোগলিক সীমারেখার কারণে উত্তোলনকারীরা বারবার পাবনা জেলার মধ্যে পালিয়ে যায়।