বন-পরিবেশ বাজেটে উপেক্ষিত

0
463

জান্নাতুল ফেরদৌস প্রিয়ন্তী,গড়াইনিউজ ২৪.কম: বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঠিক দুই দিন আগে জাতীয় সংসদে পেশ করা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি রোধ নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। গত বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এবারের বাজেটে তা কমিয়ে এক হাজার ২২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, গত বাজেটের তুলনায় কমেছে ২৫ কোটি টাকা। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার’ থাকলেও বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা মনে করেন, এই খাতে সরকারের অবহেলার কারণে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সার্বিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২০ সালের এনভারমেন্ট পারফরমেন্স ইনডেক্স (ইপিআই) অনুযায়ী চরম ঝুঁকিপূর্ণ ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২তম। জলবায়ু সংক্রান্ত বরাদ্দগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জলবায়ু সংক্রান্ত বরাদ্দ ছিল ৪১৯ দশমিক ৯২ কোটি টাকা। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭৯ দশমিক ২১ কোটি টাকা। সরকার মোট উন্নয়ন বাজেটের ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, ১১ দশমিক ৫ শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে, ১৫ দশমিক ১ শতাংশ স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে, ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষি খাতে, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে, ৬ দশমিক ৪ শতাংশ জনপ্রশাসন খাতে ও ৩ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রতিবেশের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্যে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।সরকার পঞ্চমবারের মতো পৃথক জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ুজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো এই বাজেটে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সেই ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ জলবায়ুজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে। গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতায় ‘প্রতিবেশ’ বা ‘পরিবেশ পুনরুদ্ধারের’ বিষয়ে তেমন কিছু শোনা যায়নি। বায়ু দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ১৬টি সার্বক্ষণিক বাতাস পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন হতে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাতাস পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের পর বাতাসের মান নির্ধারণ ও তা প্রতিদিন প্রকাশ করা হবে।আন্তর্জাতিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে ঢাকাকে চরম দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও, ‘হোলো ব্লক’ ব্যবহার করে বায়ু দূষণ কমানোর কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন।শব্দ দূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সচিবালয় এলাকাকে হর্ন-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক (বাপা) শরীফ জামিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘পরিবেশবাদীরা পরিবেশ রক্ষার জন্যে যা প্রয়োজন তা করার কথা বললেও সরকার সাধারণত তা উপেক্ষা করে থাকে।’ পানি ও বায়ু দূষণ বন্ধ এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্যে উদ্যোগ নেওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারকে তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখছি না।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার ওপর সরকারকে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি, প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও নিতে হবে। এসব বিষয় এখন বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন স্বল্প উন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। অন্য দেশগুলো এখন জানতে চাইবে এখানকার পণ্যগুলো টেকসই পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে কি না।’ ট্যানারি শিল্পের দূষণ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে।