কথা বলে প্রতিবন্ধী মুকুলের আঁকা ছবি

0
483

গড়াই নিউজ ২৪.কম::খাগড়াছড়ি: বাকি দশটা ছেলের চেয়ে একটু অন্যরকম মুকুল কান্তি ত্রিপুরা (১৮)। তাই সমাজের বাঁকা চোখ তাকে তাড়িয়ে বেড়ালেও এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

আপন গতিতে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে ছুটছেন প্রতিবন্ধী মুকুল। ছোটবেলা থেকে যে চিত্রাঙ্কনে বুদ থাকতো তা ইতোমধ্যে তাকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষগুলোও তাকে নিয়ে গর্বিত। এলাকার শিশুদের চিত্রাঙ্কনের গর্বিত শিক্ষক তিনি।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম মায়াফা পাড়ার মহেশ ত্রিপুরার ছেলে মুকুল কান্তি ত্রিপুরা। তিনি জন্মগতভাবেই খর্বাকৃতির। তার উচ্চতা ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। জুম চাষি বাবার ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট মুকুলের বেড়ে ওঠা হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতায়। শিশু অবস্থা থেকে চিত্রাঙ্কনের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল মুকুলের। দীঘিনালার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণিতে উপজেলা পর্যায়ে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান তিনি। পরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন মুকুল।
সেখানে চার বছর ধরে লেখাপড়াসহ চিত্রশিল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ হয় তার। চিত্রশিল্পী রিগেন চাকমার কাছ থেকে ছবি আঁকার ওপর প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন মুকুল। তার আঁকা ছবিগুলো একটা পর্যায়ে মানুষের প্রশংসা কুড়ায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের আগেও মুকুল অনায়াসে আঁকতে পারতেন যেকোনো ছবি। এঁকেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি, খরা, বন্যা আর দুর্ভিক্ষের নানা ছবি। পছন্দ হওয়ায় অনেককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন তার আঁকা ছবি।

এ প্রজন্মের শিশুদের তার মত করে ছবি আঁকায় পারদর্শী করে তুলতে এখন তিনি নিজ গ্রামের একটি মন্দিরে বিনা পয়সায় চিত্রাঙ্কন শেখাচ্ছেন। চিত্রাঙ্কন শিখতে পেরে তাতে খুশি শিশুরাও। তার শেখানোতে এলাকার কিছু শিশু ভালো মানের ছবিও আঁকতে পারে। গ্রামের বাসিন্দারাও গর্বিত মুকুলের এমন উদ্যোগে।দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী পিপাসা ত্রিপুরা জানায়, গত দুই বছর ধরে মুকুল স্যারের কাছে আমি আর্ট শিখি। সপ্তাহে দুইদিন করে ক্লাস নেয়। বিনিময়ে তিনি কোনো টাকা নেন না। পুনিতা ত্রিপুরা ও শাপলা ত্রিপুরা জানায়, মুকুল স্যারের কাছে আর্ট শিখতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের মত অনেকে স্যারের কাছে আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

শারমিন আক্তার সোমা/গড়াই নিউজ ২৪.কম::