বিশেষ সম্পাদকীয় – আতিকুজ্জামান ছন্দ

0
1523

গড়াইনিউজ২৪.কম:: মেধাবী তাদের ন্যায্য অধিকার ব্যাহত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। কথায় একটি প্রবাদ আছে, কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই আর এই প্রবাদটি যেন এই ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। আইন আছে তা প্রয়োগ নেই বা মানা হবে না সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনিতেই আমাদের শিক্ষার নানা সমস্যা। শিক্ষার চাহিদা ও যোগানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন মান নিয়ে। এমনিতেই শিক্ষার প্রসার যতটা ঘটছে, মান ততটা বাড়ছে না এমন অভিযোগ অহরহ উঠছে। শিক্ষা অধিদফতর এ ধরনের বিধি না মানাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বললেও যারা এসব করছেন, তাদের নিবৃত্ত করতে কর্তৃপক্ষ কার্যত ব্যর্থ। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি ও শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও বেশিরভাগ বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তা মানা হয় না। উল্টো অজুহাত পেলেই বাড়িয়ে দেয়া হয় ভর্তি ফি ও বেতন। জাতীয় বেতন কাঠামোর অজুহাত তুলে চলতি বছরের শুরুতেই বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি ও ছাত্রদের মাসিক বেতন কোন কোন প্রতিষ্ঠান দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ফির নামে হাতিয়ে নেয়া হয় নির্ধারিত টাকা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধানেরও তোয়াক্কা করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। যারা প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষায় বৃত্তি পাবে তাদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা যাবে না- সরকারের এমন কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না বেসরকারী নামীদামী স্কুলগুলো। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষাবৃত্তির টাকা গ্রহণের আগেই শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে কলেজ উন্নয়ন ফি। উন্নয়ন ফি না দিলে দেয়া হবে না শিক্ষাবৃত্তি এমন অভিযোগের কথাও শোনা যায়। ভর্তি ফি, নিবন্ধন ফি, উন্নয়ন ফি, টিউশন ফিসহ সবধরনের ফি-এর টাকাই বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে বৃত্তি পাওয়ার মাধ্যমে ততটা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে না স্বীকৃত এসব মেধাবী শিক্ষার্থী। অথচ শিক্ষাবোর্ডের জারি করা নির্দেশনায় বলা আছে, সকল মেধাবৃত্তি ও সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন (টিউশন ফি) আদায় করলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাস্তবে টিউশন ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে এমন নজির নেই শিক্ষাবোর্ড বা শিক্ষা অধিদফতরের। উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রীকে প্রাথমিকের সাধারণ ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। আর ট্যালেন্টপুলের বৃত্তি নির্ধারিত হচ্ছে উপজেলার পরীক্ষার্থীর সংখ্যার হিসেবে। বেসরকারী বিদ্যালয়গুলোর এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারে অবশ্যই অন্তরায়। প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কোথাও কোথাও সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও সরাসরি সম্পৃক্ত। বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের পরিস্থিতি রোধে তাদের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা জরুরী। মানুষ আশা করে নিজেদের সুনামের স্বার্থে তারা এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হবেন। উন্নয়ন ফির নামে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়।