গৌরবময় ৪৬তম বিজয় দিবস আজ

0
1192

গড়াইনিউজ২৪.কম:: আজ ১৬ ডিসেম্বর আমাদের গৌরবময় ৪৬তম মহান বিজয় দিবস। স্বাধীনতা যুদ্ধপর্বের অবিস্মরণীয় একটি দিন। লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। ১৯৭১ সালের এদিন বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানী সেনারা মাথা নিচু করে যৌথ কমান্ডের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে । বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। যে অস্ত্র দিয়ে তারা দীর্ঘ নয় মাস বাঙালির রক্ত ঝরিয়েছে, ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি নিয়ে দুরন্ত বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয়। সেদিন জাতি নির্ভয়ে গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের অবিনাশী গান। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর এ জাতির অহংকারের বিজয় দিবস। বাঙালির শৌর্যবীর্য এবং বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। পরে ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধু  স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙ্গালি নিধনের অংশ হিসেবে ২৫শে মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে যার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, তৎকালীন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয় যা পাকিস্তানিদের কাছে ছিল একেবারেই অকল্পনীয় ও আকস্মিক। মুক্তিযুদ্ধে এটাই ছিল প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ।কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ চলার পর পাক হানাদার বাহিনী রাজারবাগের নিয়ন্ত্রন নেয় যেখানে অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করে, অনেকেই হন আহত যাদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পুলিশের এই সশস্ত্র প্রতিরোধ পাকিস্তানিদের মনোবলে চিড় ধরিয়েছিল, অন্যদিকে  সাত কোটি বাঙ্গালি হয়েছিল উজ্জ্বীবিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে ১০ই এপ্রিল গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এই সরকারই মুক্তিযুদ্ধকে একটি জনযুদ্ধে রুপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল যেখানে শ্রেনী, পেশা, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, ধর্মভেদে সব আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহন করেছিল। পরবর্তী নয় মাসের সশস্ত্র লড়াই-এ আমরা পেয়েছিলাম আমাদের কাঙ্খিত বিজয় তথা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় দিবসে তাই আনন্দের সাথে যোগ হয়েছে বেদনাও। বিজয়ের এই ৪৫ বছর অনেক চরাই-উৎরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়নে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে- শেষ হওয়ার পথে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াক্ষেত্রেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান। রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র বিজয় দিবস। বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে আজ লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। কৃতজ্ঞ জাতি দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে একাত্তর সালে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। নতচিত্তে স্মরণ করবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয়  দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজ । এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হবে। ঢাকার অদূরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। বিজয় দিবস উপলক্ষে ভোর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়াসহ ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ বিজয় দিবসের সব অনুষ্ঠান ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাবলয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।