যুক্তরাষ্ট্রে ৮১৮ কোটি টাকা নিতে পারবে মেটলাইফ

0
112

ঢাকা অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: মুনাফার এক হাজার কোটি টাকা থেকে ৮১৮ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে পারবে মেটলাইফ। অংশগ্রহণমূলক পলিসি ও আয়কর বাবদ বাকি ১৮২ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে হবে। মালিকদের মুনাফার অংশ হিসেবে এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে কোম্পানিটিকে অনুমোদন দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে এ অর্থ একবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া যাবে না। চার কিস্তিতে এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে হবে। আর এক কিস্তির পর পরবর্তী কিস্তির অর্থ পাঠানো যাবে তিন মাস পর। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এভাবে কোম্পানিটিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রধান কর্যালয়ে মুনাফার অংশ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে আইডিআরএ’র কাছে মেটলাইফ ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ এই চার বছরে মালিকদের লভ্যাংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার এক কোটি ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৭৩২ টাকা নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ২৮০ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৬ টাকা, ২০১৮ সালের ২৯৮ কোটি ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকা, ২০১৭ সালের ১৯০ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৬০১ টাকা এবং ২০১৬ সালের ২৩২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। বিদেশি এ বিমা কোম্পানিটি অ্যালিকো নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে ১৯৫২ সালে। ২০১০ সালে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটি কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক জীবন বিমা কোম্পানি মেট্রোপলিটন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ। তখন থেকে এর নতুন নামকরণ করা হয় মেটলাইফ অ্যালিকো। পরবর্তীসময়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কোম্পানিটি নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করে মেটলাইফ। এ নামেই বর্তমানে কোম্পানিটি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। বিমা আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার তিন বছর ছয়মাসের মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনের এ বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত মেটলাইফ। অন্য বিমা কোম্পানির মতো মেটলাইফকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ছাড়াই ব্যবসা করে মেটলাইফ বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রথম অবহিত করা হয় ২০১৩ সালে। সেই প্রথম সেই শেষ। এরপর কোম্পানিটিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধ্য করতে আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেটলাইফ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কার্যত কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার (প্রায় ৫শ কোটি টাকা) মুনাফা নিয়ে গেছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে শুধুই তাদের পণ্য বিপণন করছে। বিমাখাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এমনকি কোম্পানিটি বিমা ব্যবসা শুরু করতে বাংলাদেশে এক পয়সাও নিয়ে আসেনি। অথচ কোটি কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করে নিয়ে যাচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নিরীক্ষা ফার্ম কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর চলতি বছরের ১৯ মার্চ একটি ত্রিপক্ষীয় শুনানি করে আইডিআরএ। ওই সভার পরই আইডিআরএর ১৫৮তম সভায় মেটলাইফকে যুক্তরাষ্ট্রে মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে মেটলাইফকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি আইডিআরএ।এ বিষয়ে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমা আইন ২০১০-এর ৮২ ধারার বিধান অনুযায়ী অংশগ্রহণমূলক ও অ-অংশগ্রহণমূলক পলিসি বাবদ অর্জিত উদ্বৃত্ত (যা দায়মূল্যায়ন শেষে নির্ধারিত হয়) বণ্টিত হওয়ার বিধান রয়েছে। বর্তমানে অংশগ্রহণমূলক পলিসির লভ্যাংশ বণ্টন প্রবিধানমালা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে অ-অংশগ্রহণমূলক পলিসির ক্ষেত্রে শতভাগ মুনাফা বণ্টনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেটলাইফের আবেদনেরপরিপ্রেক্ষিতে রক্ষণশীল পদ্ধতি বিবেচনায় নিয়ে অ-অংশগ্রহণমূলক পলিসির ১০ শতাংশ অর্থাৎ, চার বছরে মোট ৬২ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬২ টাকা সংরক্ষণ করে অবশিষ্ট অংশ প্রত্যাবাসন করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।এতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা জারি হলে উক্ত সলভেন্সি মার্জিনের শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে মেটলাইফকে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তা পূরণ করতে ৩৮৮ কোটি টাকা মেটলাইফ আগেই সংরক্ষণ করেছে। বর্তমানে খসড়া সলভেন্সি মার্জিন সংক্রান্ত প্রবিধানমালা অনুযায়ী মোট দায়ের ৩ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে। ২০১৯ সালের দায়মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট দায় ১২ হাজার ৩৮১ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ১৯ টাকার ৩ শতাংশ দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮১ টাকা। এক্ষেত্রে মেটলাইফের যেহেতু প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ সলভেন্সি বাবদ সংরক্ষণ করা আছে, সুতরাং সলভেন্সি মার্জিন বাবদ কোনো অর্থ সংরক্ষণ না করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আয়কর কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বিতর্কিত ২৪১ কোটি টাকা মেটলাইফের কাছে দাবি করেছে, যা বিভিন্ন পর্যায়ে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ভবিষ্যতে করদায় মেটানোর জন্য রক্ষণশীল পদ্ধতিতে মেটলাইফকে মুনাফা থেকে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ, ১২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংরক্ষণ করে এবং আয়কর বাবদ প্রভিশন করার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অ-অংশগ্রহণমূলক পলিসির ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ও আয়কর বাবদ ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হলে মেটলাইফকে মোট ১২৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৬ টাকা সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট মুনাফা ৮১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার ২০৫ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে প্রত্যাবাসন করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনা করে মুনাফার অর্থ চার কিস্তিতে (প্রতি কিস্তি তিন মাস পরপর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত মেটলাইফ কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিচ্ছে, জানতে চাইলে মেটলাইফের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের দিকনির্দেশনা ও সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বরাবরের মতোই এ ব্যাপারে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় পরিচালিত হবো। দেশের জনগণের ও অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে আমরা সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করছি। যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে মেটলাইফকে যুক্তরাষ্ট্রে মুনাফার অংশ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।