কুষ্টিয়ায় বিআরবি তে লক্ষাধিক মানুষের ভরসাস্থল!

0
2294

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিআরবি প্রতিষ্ঠান। বিআরবি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বি আর বি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে উঠে। কুষ্টিয়ার এক সময়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মোহিনী মিলস বন্ধ হয়ে যায় ১৯৮২ সালে। তারপর থেকেই বি আর বি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড-ই কুষ্টিয়ার একমাত্র বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। অবশ্য বি আর বি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ধারায় কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে এই প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা লাভ করে – যেমন কিয়াম মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ, এম আর এস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ, বি আর বি পলিমার লিঃ, টিপিটি কেবলস লিঃ, বি আর বি এনার্জি লিঃ। বি আর বি প্রতিষ্ঠানের এ উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনুপ্রানিত হয়ে কুষ্টিয়াতে ছোট বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠেছে। বিআরবি প্রতিষ্ঠানের এ সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠার পর কুষ্টিয়ার মানুষের বেকারত্ব দূরীকরণ সহ স্বচ্ছলতা ফিরে আসে – আর এতে বি আর বি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অসামান্য। এ প্রতিষ্ঠান সমুহের উৎপাদিত পণ্য মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে চলেছে। বিআরবির পণ্যের সুনাম রয়েছে। গুনগত মান ও টেকশই পণ্য এই ছোট্ট শহর কুষ্টিয়া থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশে বি আর বি কেবলই প্রথম ও সেরা। বি আর বি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছে। আর এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। আর হিসেব করলে দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের দ্বারা প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবন-যাপন করে চলেছে। স¤প্রতি বিশ্বে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ করোনাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মানুষ সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিআরবি’র সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। করোনা ভাইরাসে দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। সারাদেশে ক্রমেই সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বন্ধ থাকে দেশের সব কার্যক্রম। কয়েক ধাপে ছুটি আরো বাড়ানো হয়। সে সময় বিআরবি প্রতিষ্ঠানও তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখে, যদিও সে সময় স¦াস্থ্য বিধি মেনে কল-কারখানা খোলা রাখায় তেমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবুও বি আর বি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্য্যক্রম বন্ধ রাখে এবং জানা গেছে তিন মাস তারা তাদের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সরকার সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানা সহ বিভিন্ন সেক্টর খুলে দেয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো স্বাস্থ্য বিধি মানা সহ সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা মেনে খোলা হয় বিআরবি প্রতিষ্ঠান। বিআরবি প্রতিষ্ঠানের মতো কুষ্টিয়ায় অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন- উডল্যান্ড, মডার্ণ প্লাইউড, রেনউইক যজ্ঞেশর, কেএনবি এগ্রো ফিড লিঃ, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, কুষ্টিয়া সুগার মিল, খাঁজানগরের বিভিন্ন চালের মিল, কুমারখালীর বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল কারখানাসহ কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কার্যক্রম শুরু করে। তারপরও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ বিআরবি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষ কর্মরত সেখানে কিছু মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ হওয়াটাই বর্তমান সময়ে স্বাভাবিক। তাও এই সংক্রমন যে কারখানা থেকে হয়েছে এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। কেননা তারা ডিউটি পরবর্তি বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। আর এই কুষ্টিয়া শহরে বহু লোকের বসবাস। জীবিকার তাগিদে হাট-বাজার, পথে-প্রান্তরে, শপিং মল, রেস্তোরায় সব সময় প্রচুর লোকের সমাগম ও আনাগোনা রয়েছে। কেননা কতদিন, কতদিন মানুষ ঘরে বসে থাকবে। তাই জীবন-জীবিকার কাছে পরাজয় মেনে মরণঘাতি করোনাকে সঁপে দিয়েছে প্রাণ। এ সমস্ত লোকের মধ্যে প্রচুর লোক অসুস্থ এবং কিছু মারাও গেছে। তাই এই সংক্রমন এখান থেকেও হতে পারে। সুতরাং বি আর বি প্রতিষ্ঠানের সংক্রমনের জন্য বি আর বি প্রতিষ্ঠান দায়ী এ কথা সঠিক নয়। জানা মতে প্রতিষ্ঠান থেকে সব সময় স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতন করে আসছে এবং করেই চলেছে। তবুও কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারীরা সচেতন নয়, সাধারণ মানুষও সতেচন হচ্ছেন না। বি আর বি প্রতিষ্ঠানে যে দুই/তিন জন মারা গেছে তারা করোনার কারণে মারা গেছে এমনটি নয়। তাদের কীডনি, হার্ট, ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্ট সমস্যা ছিল, পরবর্তিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই জেনে-শুনে অন্যায় করে। যেমন সে নিজের অসুস্থতাকে গোপন করে ডিউটিতে আসে, টেষ্ট করাই – পজিটিভ পায়, সেটিও গোপন করে থাকে। দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরে অনেক দায়িত্বশীল প্রশাসনের লোক, জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তি ফ্রণ্ট লাইনে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এনাদের মধ্যে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আবার সুস্থতাও লাভ করেছেন। যারা জীবন-জীবিকার তাগিদে রিলিফ নিতে আসে তারাও আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে এনারা কি বিআরবি-র কারণে আক্রান্ত হয়েছেন? নিশ্চয় না। আমরা দেখেছি ঈদুল ফিতর পরবর্তী কুষ্টিয়াতে ব্যাপক আক্রান্ত হয়েছে। এর কারণে ছুটিতে ঢাকা থেকে লোকজন এসেছেন, নারায়নগঞ্জ – যা কি না বাংলাদেশে প্রথম করোনা ঘাটি বলে আখ্যায়িত সেখান থেকে লোকজন এসেছেন, আবার কিছু লোক বিদেশ থেকেও এসেছেন। আর তাদের মাধ্যমেই কুষ্টিয়াতে ছড়িয়েছে। তাহলে এখানে বিআরবি-র দায়-ভার কোথায় ? কিন্তু শুধুমাত্র স্বার্থ হাসিল না করতে পেরে বা প্রতিহিংসার কারণে একটি চক্র দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিআরবি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা মনে করেন, বিআরবি’র ক্ষতি মানেই দেশের ক্ষতি। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি। বিআরবি’তে কর্মরত মানুষের ক্ষতি, কর্মরতদের উপর নির্ভরশীল হওয়া মানুষের ক্ষতি। তাই এধরনের চক্রদের নীলনকশা কঠোর ভাবে রোধ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন সচেতন মহল। জানা যায়, দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এ প্রতিষ্ঠান বিআরবি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে থাকে এবং মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে থাকে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কুষ্টিয়াতে। যা কুষ্টিয়ার মানুষের গর্বের বিষয়। তাই এ অঞ্চল, এ অঞ্চলের মানুষের কথা বিবেচনা করে বিআরবি’র সুনাম রক্ষার্থে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করার আহ্বান জানান সচেতন মানুষেরা। এ বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, দি কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রবিউল ইসলাম বলেন, মোহিনী মিলস ধ্বংসের পর বিআরবি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার অর্থনীতি ও কুষ্টিয়ার মানুষের বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। শুধুমাত্র ব্যক্তি আক্রোশের কারণে দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিআরবিকে নিয়ে যারা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন তাদের এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে সরে আসা উচিত এবং আমি তাদেরকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনা মেনেই বিআরবি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তারা তাদের আক্রান্ততার কথা গোপন রেখে অন্যদেরকেও আক্রান্ত করেছেন। এজন্য ওই গোপন রাখা আক্রা›ত ব্যক্তি-ই দায়ী। তারপরও যদি আমরা প্রমাণ পায়, স্বাস্থ্যবিধি বা সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না তাহলে অব্যশই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।