আমি সাংবাদিক পরিবারেরই একজন: প্রধানমন্ত্রী

0
2056

গড়াইনিউজ২৪.কম:: নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আপনাদের বাইরের কেউ নই। আমাকেও আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে গণ্য করবেন। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সংবাদপত্রের সহযোগিতা তিনি কখনও সেভাবে পাননি। যদিও কে কী লিখল তা নিয়ে তিনি ভাবেন না। তিনি কাজ করেন আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে।  বুধবার অসুস্থ ও অস্বচ্ছল সাংবাদিকদের মধ্যে অনুদান বিতরণকালে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১১৩ জন অসুস্থ ও অস্বচ্ছল সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রহমত আলী এবং কয়েকজন সাংবাদিক নেতা। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনও সংবাদপত্রের সহযোগিতা ওইভাবে পাইনি। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় সম্পর্ক ছিল। এটা হয়েছে জাতির পিতার কারণে। তিনি ইত্তেহাদ, মিল্লাত, ইত্তেফাক এসব পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক নিজে বিক্রি করেছেন। সাংবাদিকতায় তিনি কাজ করেছেন। তাঁর আত্মজীবনীতে লেখা আছে, তিনি সংবাদপত্রের লোক ছিলেন। এ হিসেবে আপনারা আমাকেও আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য করবেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবাদপত্রকে অনেকে বলেন সমাজের দর্পণ। এখন যোগ হয়েছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিই। এর উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা সংবাদপত্র খাতও উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে নিয়মিত প্রেসক্লাবে যেতাম। আড্ডা দিতাম, চা-পুরি, সিঙ্গারা খেতাম।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকালে এক কাপ চা ও একটি পত্রিকা যে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ! টেলিভিশন বন্ধ রেখে সকালে পত্রিকা নিয়ে বসি। সব পত্রিকা যে পক্ষে লেখে তা নয়। প্রয়োজনীয় সংবাদগুলো মার্ক করি। সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলি। সংবাদপত্র থেকে অনেক তথ্য পাই। দুর্গম জায়গার অনেক তথ্যও সংবাদপত্রে আসে। তাতে আমরা সহযোগিতা পাই। এজন্য সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’ সরকার সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথা বলার স্বাধীনতা সবারই আছে। কাউকে বাধা দিইনি। কেউ বলতে পারবে না কারও গলা চিপে ধরেছি। সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করার দরকার সবই করছি।’ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের প্রতি জাতির জনক আন্তরিক ছিলেন এমনটা জানিয়ে তার কন্যা বলেন, ‘আপনারা জানেন, স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানিরা পত্রিকা পুড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সমস্ত সাংবাদিককে কিন্তু সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন জাতির জনক। তাদের অনেককে সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন। এই সুযোগ দেয়ার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছিল। যদিও সেই কমিটির সদস্যরা পঁচাত্তরের পর সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়েছিল।’ ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন’ এমন অপপ্রচারের জবার দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘পত্রিকা চালানোর মতো অনেকের ক্ষমতাই ছিল না। তাছাড়া স্বাধীনতাবিরোধীরা তখন সক্রিয় ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তখন যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল সেটা তুলে ধরতো না।’ এ সময় সাংবাদিকদের কল্যাণে জাতির পিতার নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।  সাংবাদিকদের কল্যাণে ট্রাস্ট গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখলাম সাংবাদিকরা কষ্ট পাচ্ছেন, তখন কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিই। প্রথমে ২০ লাখ দিয়ে শুরু করি। এখন এই ট্রাস্টে আছে ১৪ কোটি টাকা। আমি আরও ১০ কোটি টাকা দেব। পরে সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানান, সংবাদপত্রের মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া সাপেক্ষে তিনি আরও ২০ কোটি টাকা দেবেন এই ট্রাস্টে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এত দিচ্ছি, মিডিয়ার মালিকরা কেন দেবে না? আমাদের বলার পর মাত্র দুইজন দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ইত্তেফাক) ও অঞ্জন চৌধুরী। সবার আগে টাকা নিয়ে আসেন মাছরাঙার অঞ্জন চৌধুরী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী একটু মজা করে বলেন, অনুদান যারা পাচ্ছেন গোপালগঞ্জের তো কেউ নেই, সব দেখি কুষ্টিয়ার (তথ্যমন্ত্রীর এলাকা)। তবে আমি এক দিক দিয়ে খুশি, কারণ গোপালগঞ্জে কোনো অস্বচ্ছল নেই। আমি চাই সবাই স্বচ্ছল হয়ে যাক। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে অনলাইন সংবাদপত্রেরও বিকাশ ঘটছে। তবে ভয়ংকর অপপ্রচার ও গুজবও অনলাইনে প্রচারিত হয়। এজন্য একটি অনলাইন নীতিমা লা করছে তার সরকার।সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা সমাধানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাম ফ্ল্যাট যখন করা হয় তখন বলেছিলাম সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের জন্যও বরাদ্দ থাকবে। কিন্তু আমরা আর আসতে পারিনি। এখন কিছু ফ্ল্যাট হচ্ছে, যা ভাড়া দিয়েই মূল্য পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া প্লট যখন দেয়া হয় তখন অনেকেই পেয়েছেন। তবে এখন মনে হচ্ছে প্লট না দিয়ে ফ্ল্যাট করে দিলে অনেককে দিতে পারতাম। জাতির পিতার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরাও তাতে বিশ্বাস করি। স্বাধীনতা ভালো, তবে বালকের জন্য নয়। বালকীয় আচরণ যেন কেউ না করে।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের কথা বলেছিলাম। দিন বদল হয়েছে, এটা এখন স্বীকার করবেন। তিনি বলেন, শুধু এতটুকু বলব, উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি, সফল কতটুকু, সুফল কতটুকু পেল মানুষই তা বিচার করবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা এটা আমার দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মাঝে মাঝে চিন্তা করি এত পরিশ্রম করি এতে লাভ কী। মূলত লাভের চিন্তা করি না। কী দিতে পারলাম, কী পরিবর্তন আনতে পারলাম সেটাই বিবেচ্য বিষয়।