মংলা বন্দরে বাৎসরিক আয় ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা

0
2268

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, মংলা বন্দর থেকে ফিরে, গড়াইনিউজ২৪.কম:: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর হিসেবে মংলা বন্দরের যাত্রা শুরু ১৯৫০ সালে।নানা চড়াই উৎরাই পার করে এ বন্দর এখন শুধু লাভ জনক প্রতিষ্ঠানই নয়, সম্ভাবনাময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ দুয়ারেরদিকে দ্রুত করে এগিয়ে চলছে বন্দর সূত্র জানায়,গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত লাভের পাল্লাই ভারি ছিল সেখানে। কিন্তু এরপরই নেমে আসতে থাকে দুর্দিন। ১৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ায় নিটমুনাফা আসে ৬৪ কোটি টাকা ৭৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা।এ বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।পাঁচ বছরে সম্মেলিত মুনাফা হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। গত ২০০৪- ০৫ অর্থবছরে ১১ কোটি টাকা লোকসান দেয় মংলা বন্দর। পরের বছর এর পরিমাণ ছিল ৯ কোটি টাকা। লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তবে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কারসহ ৫৭০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্পহাতে নেওয়ায় মংলা বন্দরের গতি ফিরেছে।৬৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করা মংলা বন্দরকে এক সময় বলা হতো নিঝুমপুরী। দেশেরদ্বিতীয় বৃহত্তম এই বন্দরকে যেতে হয়েছে নানা চড়াই উৎরাইয়েরমধ্য দিয়ে। অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছারঅভাব ও প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল বন্দরটি। ব্যবসায়ীরাও হাত গুটিয়ে নেওয়ায় এক পর্যায়ে মংলা বন্দর লোকসানের মুখ দেখতে শুরু করে। তবেকাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেলেও গত ৯ বছরে এ বন্দর অনেকটাই এগিয়েছে। ২০০৭ সালপর্যন্ত লোক সানের ধারা অব্যাহত থাকলেও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বেশ কিছু উন্নয়ন মূলককর্মকাণ্ড হাতে নেওয়ায় লোকসান কাটিয়ে বন্দরটি লাভের ধারায় ফিরছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মংলা বন্দরব্যবহারকারী মেসার্স হাসেম অ্যান্ড সন্স এর মালিক জুলফিকার আলী বলেন, ‘নৌ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতিসহ সময়মতো মালখালাস হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহীহয়ে উঠেছে। প্রাণশক্তি ফিরে পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বন্দরেপণ্য খালাসও বেড়েছে।’
বন্দরের আরেক ব্যবহারকারী নুরু অ্যান্ডসন্স-এরমালিক এইচ এম দুলাল বলেন, ‘চিংড়ি ও পাট যেটা সরাসরি মংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে চলে যেত, এখন সেসবপণ্য আবার মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি হচ্ছে। এই বন্দর দ্রুতই গতিশীলহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেরমানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালীহবে।’
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বন্দরে দিন দিন আয় বেড়ে শত কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজারটাকাআয়করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ায় নিট মুনাফা আসে ৬৪ কোটি টাকা ৭৩ লাখ ৭১ হাজারটাকা। পাঁচবছরে সম্মেলিতমুনাফাহয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজারটাকা।’মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান বলেন, ‘জাহাজের আগমন বেড়ে যাওয়ায় অটোমেটি কবন্দরের আয় বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে কেবল নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ ও সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ফলে। আগামীতে আরও নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংযোজন হবে।’
জানাযায়, আয়বাড়ার সঙ্গে মংলা বন্দরদিয়েসরাসরিরফতানিরপরিমাণও বেড়েছে। একসময়পাটকলগুলোরকারণেপাটপণ্য রফতানির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমছিল এই বন্দর। কিন্তু বিশ্ব বাজারেপ্রতিযোগিতায়টিকে থাকতেনাপারায়একের পর এক পাটকলবন্ধহওয়ায় এই বন্দরদিয়েরফতানিরপরিমাণকমেছে। তবেআবারওপাটরফতানি বেড়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষেরপরিচালকট্রাফিক মোস্তফা কামালবলেন, ‘গত বছর এই বন্দরদিয়ে ৩৮ হাজার ৩২৩ মে. টনপাটরফতানিহয়েছ। চলতিবছরের গত মে মাসপর্যন্ত রফতানিহয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৫ মে. টনপাট।’
বন্দর চেয়ারম্যানকমোডরফারুকহাসানআরওবলেন, ‘পদ্মা সেতুএখনওহয়নি। ২০১৮ সালেরমধ্যে যখনপদ্মা সেতুহবেতখন এ পরিস্থিতিরআরওউন্নতিহবে। ঢাকা থেকে মংলাবন্দরের দূরত্ব কম হবে, এতে সময় কম লাগবে। এ কারণেইরফতানিযোগ্য আরএমজিগুলোমংলা বন্দরদিয়েরফতানিহবে, তাতে কোনওসন্দেহ নেই।