গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটন হত্যার ঘটনা নিয়ে ধূম্রজাল

0
2150

গড়াইনিউজ২৪.কম:: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কয়জন হত্যা করতে এসেছিল, কোন মোটর সাইকেলে এসেছিল, তাদের পোষাক-পরিচ্ছদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবিদারদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে এই ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে লিটনের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে লিটনের বাড়ির নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে শুধু নেতাকর্মীরা নয় বিপুলসংখ্যক ক্যাডার সার্বক্ষণিক থাকতো। তারপরও কিভাবে লিটনকে হত্যা করা হলো সে নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। শহিদুল ইসলামের বক্তব্যের ফলে লিটন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রবিবার রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এক প্রতিবাদ সভায় বলেছেন, জামায়াত-শিবির এমপিকে হত্যার হুমকি দিলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিকে জামায়াত-শিবিরের দোসর বলে আখ্যায়িত করেন। নিহত লিটনের ঘনিষ্ঠজন, আওয়ামী লীগ এবং গোয়েন্দাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে হত্যাকাণ্ডের পাঁচটি বিষয় উঠে এসেছে। যে সকল বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো, জেএমবি ও জঙ্গিদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পারিবারিক শত্রুতা এবং সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবিদার এবং শ্যালক দেদারুল আহসান, প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর শাহাবাজ মোল্লা গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র রাজমিস্ত্রি মো. নাহিদ, লিটনের বাড়ির গৃহপরিচারিকা রোকসানা বেগম, কেয়ারটেকার ইসলাম একেক সময় একেক কথা বলছেন। কেউ বলছেন, দুইটি মোটর সাইকেলে করে পাঁচজন যুবক। আবার কেউ বলছে তিনজন যুবক ছিল। কেউ বলছেন, যুবকরা হেলমেট পড়েছিল আবার কেউ বলছেন মাফলার পড়া ছিল। আবার বলা হচ্ছে, যুবকদের একজনের হেলমেট ছিল অন্যদের মাথায় কিছু ছিল না। কেউ বলছেন, এমপির ড্রয়িংরুমে ঢুকে এক সন্ত্রাসী গুলি করেছে, তার সঙ্গে আর একজন ছিল। আবার কেউ বলছেন, জানালা দিয়ে এমপিকে গুলি করা হয়েছে। কেউ বলছেন, তার স্ত্রী ও কেয়ারটেকার নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসেছিলেন। আবার কেউ বলছেন, কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে নিয়ে তিনি ড্রয়িংরুমে গল্প-গুজব করছিলেন। এ রকম অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। ফলে পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে এমপি হত্যাকান্ডের ঘটনা একেক গণমাধ্যমে একেক ভাবে প্রকাশ ও প্রচার হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে সোমবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপরোক্ত বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও আত্মীয়-স্বজনরা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়ায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করছেন। তবে আজ পর্যন্ত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দার সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে তিনি কমিটির প্রধানের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান। আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ, এমপি লিটনকে হত্যার আগ থেকেই তাকে রেকি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই তথ্য মূল কিলার গ্রুপকে সরবরাহ করা হয়। তারা নির্জনতার সুযোগ বুঝছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যায় এমপি একাই বাসায় রয়েছে এই খবর সংগ্রহ করে তারা সেখানে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সূত্র মতে, এমপি’র ঘনিষ্ঠজনরাও এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতভাবে থাকতে পারে। কারণ, এমপি কখন বাসায় একাই থাকেন বা হত্যাকাণ্ডের জন্য উপযুক্ত সময় তাদের মাধ্যমে তারা বেছে নেন। হত্যাকান্ডের সময় এমপি’র বাড়ির সামনের মাঠে একদল শিশু খেলাধুলা করছিল। তাদেরকে এই খুনিরা বাড়ি যেতে বলে। কিন্তু শিশুরা বাড়ি না গিয়ে খেলাধুলা করতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে শিশুরা বাড়ি চলে গেলে এবং নির্জনতার সুযোগ নিয়ে খুনিরা তার বাড়িতে প্রবেশ করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। তাদের বর্ণনাও এসেছে ভিন্নতা। তাদের মধ্যে কয়েক জন বলেছে, প্রথম ২টি মোটর সাইকেলে ৩ জন এসে এমপি’র বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। তারা দীর্ঘক্ষন সেখানে অবস্থান করার পর মোবাইল ফোনে কথা বলে। এর কিছুক্ষণ পর অপর একটি মোটর সাইকেলে আরও ৩ জন আসে। তাদের একজনের পরনে ছিল পাঞ্জাবি, একজনের পরনে কোর্ট ও সার্ট এবং আরেকজনের পরনে ছিল ফুল হাতা গেঞ্জি। হত্যাকাণ্ডের পর তারা দ্রুত মোটর সাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় খেলোয়াররা পিছনে পিছনে দৌঁড়ায়। একটি মোটর সাইকেল কিছু দূরে গিয়ে একটি ওয়াজ মাহফিলের সামনে থামে। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, মোটর সাইকেলের পিছনে তারা রেজিস্ট্রেশন নম্বর মুখস্থ করলেও পড়ে শুধুমাত্র রংপুর লেখাটি তারা মনে রাখতে পেরেছে। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন নম্বর মনে রাখতে পারেনি।