লালন শাহর জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের বুকে গর্ববোধ করে : বিভাগীয় কমিশনার

0
1805

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই লালনের দেশ কুষ্টিয়া। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জন্য কুষ্টিয়া তথা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের বুকে গর্ববোধ করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বহু লেখায় লালনের গানের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের একটি গান ইংরেজিতেও অনুবাদ করেছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২৬তম তিরোধান দিবসে ৩দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই স্বস্তির জায়গা, শান্তির জায়গা, একটা আশ্রয়ের জায়গা। সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে তিনি সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। আজকের বিশ্বের হানা-হানির এই যুগেও লালনের গানের সহজ-সরল উক্তি মানুষেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরীবাদ।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, কক্সবাজারে যেভাবে পর্যটন কেন্দ্রর কারনে বিদেশীদেও সমাগম বেশি হয় তারই ধারাবাহিকতায় এই কুষ্টিয়া লালন আখড়াবাড়ীতে পর্যটক আসবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে এবং যারা মমতা ও দরদ দিয়ে গান পরিবেশন করেন সেসব লালন শিল্পীদের নাম পরিচয় ছড়িয়ে দিতে হবে সারা বিশ্বে।
তিনি আরো বলেন, ধর্মের নামে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর নৃশংস বরবর্তা ও হানাহানি করে জাতিকে বিভক্তি করার অপচেষ্টা চালায়। লালন ফকির জাতহীন মানব দর্শন ও মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসাম্প্রদায়ীক সাম্যের সমাজ চেয়ে ছিলেন। লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। আসুন বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের চিন্তা চেতনাকে ধারন করে একটি সুন্দর দেশ ও সমাজ গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়াবাসী অত্যন্ত ভাগ্যবান। কারন কুষ্টিয়ার এই মাটি বহু গুনি ও কৃত্তিমান পুরুষের চারণ ভূমি। সে ক্ষেত্রে ফকির লালন সাঁই একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যাকে নিয়ে অনেক গবেষনা হচ্ছে। তাই লালনের দর্শন ও সৃষ্টিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং লালনের উৎসবের অনেক আগে থেকেই সারা বিশ্বে তা প্রচার প্রচারনা চালাতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বায়েছ মিয়া, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নাজমুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ বদরুদ্দোজা, বিশিষ্ট কবি আবৃত্তিকার আলম আরা জুঁই, লালন একাডেমীর সাবেক সহসভাপতি আব্দুর রশীদ চৌধুরী প্রমুখ। মুখ্য আলোচক হিসেবে সাঁইজির মতাদর্শ তুলে ধরে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের সহযোগি অধ্যাপক ড.মাসুদ রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির এ্যাডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুজিব-উল-ফেরদৌস। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীতি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্বরে খন্ড-খন্ড স্থানে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল দেয়। দর্শক-শ্রোতারা কখনো পিন-পতন নীরবতায় গান শুনছেন আবার কখনো গানের তালের সাথে সাথে করতালি দিয়ে মুখর করে তুলছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আখড়াবাড়ীর আঙ্গীনা।