আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুষ্টিয়া গণপূর্তের স্থাপনা নির্মাণ!

0
357

কুষ্টিয়া অফিস, গড়াইনিউজ২৪.কম:: বিজ্ঞ আদালতের স্থিতিবস্তা আদেশ অমান্য করে গত মঙ্গলবার ২২ মার্চ সকালে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম তড়িৎ গতিতে টেন্ডার আহবান করে মৌখিক আদেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করাতে থাকে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানতে পেরে কাজের স্থানে ছুটে গিয়ে বাঁধা দিলে ঠিকাদার নিরুপায় হয়ে কাজ বন্ধ করে চলে যান। উক্ত জায়গা নিয়ে কুষ্টিয়া সওজ ও গণপূর্ত বিভাগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আদালতে মামলা চলছে। মামলা চলাকালে যতদিন মামলা নিষ্পত্তি না হয় তত দিন কোন পক্ষই উক্ত সম্পত্তির উপর যেতে পারবে না বলে আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে দেং-৬৩/২০২১ মোকর্দ্দমার স্থিতিবস্থা বজায় থাকা অবস্থায় গণপূর্ত বিভাগ, কুষ্টিয়া কর্তৃক আদালতের আদেশ অমান্য করে নালিশী জমিতে অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ করা শুরু করেছে। উল্লেখ্য মজমপুর মৌজার নালিশী সি.এস. ১২৮১, ১২৮২, ১২৮৩, ১২৮৫, ১২৮৬ ও ১২৯৪ নং দাগের জমি যাহা আর.এস. রেকর্ড আমলে ৪৫৫৬ নং দাগে আর.এস ৩নং খতিয়ানভূক্ত হয়ে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কুষ্টিয়ার এর নামে সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়ে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। আর.এস ৪৫৫৬ দাগে মোট জমির পরিমাণ ২.৯৪৯৫ একর এবং এই জমি সহ মজমপুর মৌজার ৩নং খতিয়ানের সকল জমির খাজনা সওজ কর্তৃক নিয়মিতভাবে প্রদান করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। নালিশী সম্পত্তিতে এস.এ এবং আর.এস রেকর্ড এ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়ার (বাদী) এর কোন সত্ত্ব বা নাম নেই। গণপূর্ত অফিসের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে দেং-৪১৮/২০০৮ আর.এস রেকর্ড সংশোধনী মোকদ্দমাটি দায়ের করেন। কিন্তু তাদের স্বপক্ষে কোন প্রকার প্রমান দাখিল না করায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক মামলাটি খারিজ করে দেন। পুনরায় গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে দেং-৪৪৬/২০১৪ মামলাটি পুনরায় দায়ের করলে নালিশী জমির স্বপক্ষে সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন না করায় সেটিও ২০১৭ সালে খারিজ হয়ে যায়। খারিজ হয়ে যাওয়া দুটি মামলা পুনরায় পুনর্জীবিত করনের লক্ষে গণপূর্তের বিগত নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে মিস-১০৫/২০১৭ মামলা দায়ের করেন। উক্ত মিস মামলাটিও গত ০৫/১১/২০১৯ তারিখে পুনরায় খারিজের আদেশ দেন। অবশেষে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিস মিস কেসটি বহালের জন্য কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে ছানির আবেদন করেন এবং ১৪/১০/২০২০ তারিখ ছানি মঞ্জুর হওয়ায় মূল কেস দেং-৪৪৬/২০১৪ মোকদ্দমাটি বর্তমানে চলমান আছে। পরবর্তীতে দেং-৪৪৬/২০১৪ মোকর্দ্দমা চলমান থাকা অবস্থায় ২৯/১১/২০২১ তারিখে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের বাদী পক্ষ অত্র মোকর্দ্দমা উত্তোলন ও পুন:দাখিলের জন্য প্রার্থনা দরখাস্ত করেন। বিজ্ঞ আদালত বিবাদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনটি না মঞ্জুর করেন। অতঃপর ৩০/১১/২০২১ তারিখে বাদী পক্ষ পুনরায় অত্র মোকর্দ্দমা উত্তোলনের দরখাস্ত করে পরবর্তীতে ৩০/১১/২০২১ তারিখে বাদী পক্ষ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে দেং-৬৩/২০২১ নতুন মোকর্দ্দমা রুজু করেন। যার প্রেক্ষিতে ০১/১২/২০২১ তারিখে দেং-৬৩/২০২১ মোকর্দ্দমাটির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত ০২/১২/২০২১ তারিখে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এবং উক্ত নিষেধাজ্ঞা বলা আছে যে, মামলাটির নিষ্পত্তি কালতক তফশিলি বর্ণিত ভূমিতে থাকা বৃক্ষাদি কর্তন, ভবন নির্মাণ বা তৎসংক্রান্ত সকল কার্যাদি সংস্কারে উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। অদ্যবধি উক্ত স্থিতিবস্থা চলমান থাকলেও হঠাৎ করেই গণপূর্ত অফিস এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নালিশী জমির উপর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান সাপেক্ষে প্রাচীর নির্মাণ করে যাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাকিরুল ইসলাম বলেন, গণপূর্ত অফিস ২০০৮ সাল থেকে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন এবং হেরে যাচ্ছেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত দেং-৬৩/২০২১ মামলাটির উপর গত ০২/১২/২০২১ তারিখে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইনের বাইরে আমরা কোন কাজ করতে পারিনা। বেশ কয়েক বছর আগে থেকে এখানে একটি সার্কেল অফিস নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে আছে। ইতিপূর্বে গাছ কাটার টেন্ডারও দেওয়া হয়েছিল সেটিও আমরা করি নাই। তিনি এটাও বলেন, স্থগিতাদেশের প্রেক্ষিতে কিভাবে গণপূর্ত অফিস তড়িৎ গতিতে টেন্ডার আহ্বান করে মৌখিকভাবে ঠিকাদারকে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলেন। এ বিষয়ে আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সমাধান। অন্যদিকে গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেন নাই।